আমি প্রথম বান্দরবন যাই ২০০৭ এ। তেমন কিছুই জানতাম না। Facebook ছিল না, ToB ও ছিল না। প্রথমবার এসে মেঘলা, নিলাচল/ টাইগার হিল, স্বর্ণ মন্দির, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক দেখে ওয়াওওয়াও করতে থাকি। এগুলো সবই মুলত শহরেরআশেপাশে। সেবার ওইগুলো দেখেই পেটভরা গল্প নিয়ে ঘরেফিরি।
২য় বার এসে কেক্রাডং “জয়” করে বিজয়ী বেশে ঘরে ফিরি
এরপর বেশ কয়েকবার বার বান্দরবন গেছি, অনেক কিছুই দেখেছি। তবে আরও অনেককিছু এখনো দেখার বাকি রয়ে গেছে।
শুধু মেঘলা, নিলাচল/ টাইগার হিল ইত্যাদি জায়গা দেখতে চাইলে পরিকল্পনা করবেন এভাবে- ১ম দিন সকালে পৌঁছে ফ্রেশহয়ে নাশ্তা করে মেঘলা, নিলাচল/ টাইগার হিল, স্বর্ণ মন্দির এসব দেখতেপারেন। ২য় দিন একটা জীপ ভাড়া (টাকা ২০০০/৩০০০) করে শৈলপ্রপাত, নীলগিরি ঘুরে আসেন।
তবে বান্দরবন এর আসল ঐশ্বর্য দেখতে হলে আপনাকে আরও একটু ভিতরে ঢুকতেহবে। ২/৩ দিন পাহাড়ে হাঁটাহাঁটিকরতে হবে। আমি এখন সেই পথের কথা বলব।
দিন ১ –বান্দরবনশহরে পৌঁছে নাশ্তা করে একটা জীপ নিতে হবে রুমা বাজার পর্যন্ত। টাকা ২০০০/২৫০০ লাগবে। পৌছতে ঘন্টা দেড় লাগবে। সেখানে পৌঁছে গাইড নিতেহবে। গাইডের কয়েকটি সমিতি আছে। যেকোনো একটা থেকে একজনগাইড নিতে হবে। কেওক্রাডং পর্যন্ত গেলে দৈনিক ৪০০ করে মোট ১২০০টাকা লাগবে। জাদিপাই গেলে প্যাকেজ ২০০০/২৫০০ টাকার মত। তাদের দেয়া ফর্ম পুরনকরে আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে সেখানে নাম এন্ট্রি করতে হবে। তারপর দ্রুত গাইডের সাথেগিয়ে জীপ ভাড়া করতে হবে বগা লেক যাওয়ার জন্য। ভাড়া ২০০০ টাকা। তবে বর্ষাকালে গাড়ি বগা লেকপর্যন্ত যায় না।
বগা লেকে ওঠার শেষ রাস্তাটুকু পার হতে অনেক কষ্ট হবে। খাড়া পাহাড়ে উঠতে হবে। আসলে এই জায়গাটুকু পারহতেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় সবার। কারন, সারারাত জার্নি করে, হইচই করে সবাই খুব ক্লান্ত থাকে। একারনেই কিছু মানুষ বগাউঠেই সিদ্ধান্ত নেয় আর আগাবে না। এটা ভুল সিদ্ধান্ত। আমি অনেক বাঘা বাঘা ট্রেকারদেরজিজ্ঞাসা করে দেখছি। ট্রিপের প্রথম দিন বগায় উঠতে সবারই অনেক কষ্ট হয়। ২য় দিন থেকে আর এত কষ্টহবে না।
বগায় পৌঁছে সিয়াম দিদি/ লারাম বা অন্য কারও কটেজেউঠতে হবে। কটেজ আগে থেকে ঠিক করে রাখা ভালো। এরপর লেকে গোছল করে বাকি দিনরেস্ট। এখন যেহেতু রুমা যেতে নৌকা লাগে না সেহেতু বেলা ১১/১২ টার মধ্যে বগায়পৌঁছে অনেকেই আরও সামনে এগিয়ে যায়। তবে যারা প্রথমবার যাচ্ছে, তাদের বগায় ১ম রাত থাকাউচিৎ। স্থানটা অনেক সুন্দর। (এখানে সেনেটারি টয়লেটআছে)।
দিন ২ (আয়েশি ভ্রমন) – ভোরে উঠে খিচুরি+ ডিম ভাজি খেয়ে ভোর ৫.৩০ টার মধ্যেই রওনা হতেহবে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। পথে চিংড়ি ঝর্না দেখতে হবে। ঝর্নার উপর পর্যন্ত গিয়েনা দেখলে কিন্তু বিরাট মিস। আগে পরে আরও কিছু ঝর্না পড়বে। মোট ৩/৩.৫ ঘণ্টা হাটার পরে পাবেন কেওক্রাডং। বাংলাদেশের “সর্বচ্চ” (সরকারি তথ্য মতে) পাহাড়।
লালার হোটেলে দুপুরেরে খাবার খেয়ে আবার ফিরতি পথে বগা।
অথবা দিন ২ (একটুখানিএডভেঞ্চার ভ্রমন) – ভোরে উঠে খিচুরি+ ডিমভাজি খেয়ে ভোর ৫.৩০ টার মধ্যেই রওনা হতে হবে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। পথে চিংড়ি ঝর্না দেখতেহবে। ঝর্নার উপর পর্যন্ত গিয়েনা দেখলে কিন্তু বিরাট মিস। আগে পরে আরও কিছু ঝর্না পড়বে। কোন ঝর্নাতেই ১০/১৫ মিনিটেরবেশি সময় দেয়া যাবে না। মোট ৩/৩.৫ ঘণ্টা পরে পাবে কেওক্রাডং। বাংলাদেশের “সর্বচ্চ” পাহাড়। চুড়ায় ওঠার আগেই লালার হোটেলে দুপুরের খাবারঅর্ডার ও রাতে থাকার বুকিং দিয়ে দিবেন।
তারপরে ১০ টার ভিতরে দুপুরের খাবার খেয়ে পাসিং পাড়া হয়ে জাদিপাইপাড়া হয়ে জাদিপাই ঝর্না। কেওক্রাডং থেকে জাদিপাই যেতে কোন পাহাড়ে ওঠানাই, শুধু নামা আর নামা। ঘণ্টা ২/২.৩০ লাগবে পৌছাতে। শেষ ২০০ ফিট সাবধানে নামতেহবে। ৫০ ফিট পাটের মোটা দড়ি/কাছিসাথে করে নিয়ে গেলে এখানটায় নামতে সুবিধা হবে। লোকে বলে জাদিপাইনাকি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্না। কথাটির সাথে আমিও দ্বিমত নই। দেখলেআপনিও বোধ করি দ্বিমত করবেন না।
এখানে ঘণ্টা খানেক থেকে আবার ফিরতে হবে। আমরা ঐদিনই বগায় ফিরেএসেছিলাম। তবে সেটা বেশি কষ্টকর হতে পারে। আপনারা কেওক্রাডং এসেলালার হোটেলে ঐ রাত থাকবেন। (এখানে সেনেটারি টয়লেট আছে)।
দিন ৩ –অবশ্যইসূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠবেন। কেওক্রাডং এর চুড়া থেকে সূর্যোদয় অনেক বেশি সুন্দর। নাশ্তা করে ফিরবেন বগা। সেখান থেকে জীপ স্ট্যান্ডেগিয়ে আগেই ফোনে ঠিক করে রাখা জীপে করে রুমায় ফিরবেন।
১২ টার মধ্যে রুমায় পৌঁছে দুপুরের খাবার খেয়ে ট্রলার নিবেন রিঝুকফলস পর্যন্ত। ৮০০/১০০০ টাকা নিবে। ৩০/৪০ মিনিট লাগে যেতে। রিঝুক দেখে রুমা ফিরেআবার জীপে করে বান্দরবন।
বগাথেকে ঝিরিপথে হেঁটেও রুমা ফেরা যায়। ৬/৭ ঘণ্টা লাগে। পথটা অসাধারন সুন্দর।
রুমা থেকে বান্দরবন ট্রলারে করেও ফেরা যায়। ৩/৪ ঘণ্টা লাগবে। ৪০০০/৪৫০০ টাকা লাগতেপারে। ফিরতি পথে ৪০/৫০ কিমিসাঙ্গু দেখতে অনেক ভালো লাগবে।
এই পরিকল্পনায় ৩ দিন ঘুরে আসলে আর শৈলপ্রপাত, নীলগিরি, চিম্বুক, মেঘলা ইত্যাদি জায়গায়যাওয়া অর্থহীন। কেওক্রাডং, জাদিপাইর কাছে এগুলোকেশিশুপারক মনে হবে।
এই ৩ দিনের টুরে আরও কিছু মশলা দেয়া যায়, তবে প্রথমবার হিসেবে সেটাবাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।
অবশ্য পালনীয় কর্তব্য –
১) ভালো, মজবুত ব্যকপ্যাক নিবেন। হাতব্যাগ/ লাগেজ এসব চলবেনা, চলবে না¸ চলবে না।
২) পুরো টুরে নিজের ব্যাগ নিজের কাধে রাখতে হবে। পাহাড়ে ওঠার সময় মেকাপবক্স/ পারফিউম ইত্যাদি ফেলে দিতে হবে ওজন কমাতে। অতএব, কাপড় মাত্র ২ সেট নিবেন। অন্যান্য জিনিস যাই নিবেনভেবে নিবেন। অযথা ব্যাগ ভারী করলে পরে কাঁদতে হবে।
৩) ভালো, মজবুত স্যান্ডেল নিবেন। মাটিতে ভালো গ্রীপ করে, পিছলে যায় না এমন স্যান্ডেলনিবেন।
৪) সঙ্গে সবসময় আধা/এক লিটার পানি, সামান্য কিছু হাল্কা খাবাররাখবেন।
৫) কলার পটাশিয়াম পেশির জন্য উপকারী। পাহাড়ে উঠলে পেশির উপরঅনেক চাপ পরে। অতএব, বান্দরবন গেলে বান্দরের মত কলা খাবেন।
৬) বেশি স্যালাইন খেলে রক্তচাপ বাড়ে, ঘাম বাড়ে ফলে আরও বেশিপানি শূন্যতা সৃষ্টি হয়। অতএব, সারাদিন চলার পথে বেশি স্যালাইন খাবেন না। পানি খাবেন। অনেক তৃষ্ণা পেলেও একবারেবেশি পানি খাবেন না। হটাত পেট ভারী হয়ে গেলে হাঁটতে পারবেন না।
৭) মশা প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই Ododmos লোশন নিবেন।
৮) হাটার সময় ফুটবলারদের মত আংলেট, নী-ক্যাপ পড়বেন।
৯) টর্চ নিবেন। কম কম জ্বালাবেন। চার্জ শেষ হলে চার্জ দেয়াঝামেলা।
১০) প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন। অবশ্যই, অবশ্যই। যত দেরিতে রওনা হবেন, রোদে তত বেশি কষ্ট হবে। অলস কেউ থাকলে তাঁকে কক্সবাজারপাঠিয়ে দিন। বান্দরবন তার জন্য না।
১১) জোঁকের জন্য সবার সঙ্গে সামান্য লবন রাখবেন। জোঁক লাগলেই অযথা চেঁচামেচিনা করে আপনার পাশে জনকে লবন দিতে বলুন। জোঁক মরে যাবে।
১২) দল ১০ জনের হলে ৫ জনের ২ টা দলে হাঁটবেন। কেও যেন দলছাড়া না হয়েযায়।
১৩) ক্যাপ পড়বেন সবাই।
১৪) ছাতা/ রেইনকোট নিবেন।
১৫) ব্যাকপ্যাক কাভার নিবেন সবাই। বা সকল জিনিস বড় পলিথিনেভরে তারপর ব্যাকপ্যাকে ভরবেন।
১৬) সবাই ১টা করে পিঠে ঝুলানর মত দড়ি দেয়া কাপড়েরএক্সট্রা ব্যাগ নিবেন ।
১৭) জ্বর, পেই কিলার,আমাশা, গ্যাস্ট্রিক, স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেটইত্যাদি নিবেন।
এবং দয়া করে
১৮) বিস্কুট/ চিপস/ চানাচুর ইত্যাদির প্যাকেট বা প্লাস্টিকের বোতল, অপচনশিল বস্তু ফেলবেন না যেখানে সেখানে। যেসব পাড়ায়ডাস্টবিন আছে সেখানে ফেলুন। না পারলেপুড়িয়ে ফেলুন।
________________________________________________________________
Info from "Proactive Bappy"
যারা বান্দরবান যেতে চান তাদের জন্য কিছু জরুরী ফোন নাম্বার
চান্দের গাড়ীঃ জিয়া ড্রাইভারঃ ০১৮১২৫৭২৬৯১ ( ৪/৫ হাজার টাকা লাগে সারাদিন )।
হোটেল সাঙ্গুঃ ০১৫৫৬৫২৯৫৮৭ (৫০০ থেকে ১০০০ টাকা প্রতি রাত।দরাদরি করে নিবেন। হোটেলের মান খুব ভালো ) ।
হোটেল নিলগিরিঃ ০১৫৫৮৪২১৩১৯ ( ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা প্রতি রাত, হোটেলের মান মোটামোটি ,ভাই ব্রাদার মিলে থাকতে পারবেন আর কি!)
যদি ৫০-৬০ জন গ্রুপ হয়ে যান তাহলে খাবার এর ব্যপারে যোগাযোগ করতে পারেন রুপসি বাংলা রেস্তোরায় ; ০১৮৪৯৮৮১৫৪০ (খাবারের মান ভালো)
বান্দরবন সিটিতে কোথায় থাকবেন তার হোটেল লিস্টি দিয়ে দিলাম কিছু-
হোটেল ফোর স্টার : (বান্দরবান সদর)
সিঙ্গেল ৩০০ টাকা, ডাবল- ৬০০, ট্রিপল ৯০০ টাকা, এসি ডাবল- ১২০০ টাকা।, এসি ট্রিপল ১৫০০ টাকা।
Phone: 0361-63566, 0361-62466, 01813278731, 01553421089
হোটেল থ্রী স্টার : এটি বান্দরবান বাস স্টপের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ী এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়া হয়। এটি ৮/১০ জন থাকতে পারে ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০ টাকা, এসি-৩০০০ টাকা। বুকিং ফোন: থ্রী স্টার এবং ফোর ষ্টার হোটেল মালিক একজন, মানিক চৌধুরী-০১৫৫৩৪২১০৮৯।
হোটেল প্লাজা বান্দরবান: (সদর) Hotel Plaza Bandarban
Single 400tk, Double 850tk, AC 1200tk.
Booking Phone: 0361-63252
হোটেল গ্রিন হিলঃ (বান্দরবান সদর) Hotel Green Hill
Single 200tk, Double 350tk, Triple 500tk
Phone: 0361-62514, Cell: 01820400877
হোটেল হিল বার্ড (বান্দরবান সদর) Hotel Hill Bird
Single 250tk, Double 400tk, Triple 550tk
Phone: 0361-62441, Cell: 01823346382
হোটেল পূরবী (বান্দরবান সদর) Hotel Purobi
AC Deluxe 1400tk, AC Room 1200tk, General Single 259tk,
General Double 460tk, General Triple 600tk, General Couple 400tk
Phone: 0361-62531, Cell: 0155 6742434
No comments:
Post a Comment