Tuesday, December 30, 2014

স্বপ্নের সাজেকে একদিন

একটা সময় খুব একা ফিল করতাম, হতাশ ছিলাম, আর সাজেকের গল্প পড়তাম ব্লগে, পেপারে, বইয়ে। সেখানকার জীবনযাত্রা জেনে গিয়েছিলাম আরো দুই বছর আগেই। লুসাই পাংখোয়া জাতির কথা মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। চাকরি ছেড়ে একটা সময় সাজেকে পালিয়ে হতাশা থেকে বাচঁতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাজেক আমার দেখা হয়নি সে সময়। আরো কিছু বছর আগেই সাজেক ছিল একটা দুর্গম জায়গা। আর আজ সেখানে আর্মির কল্যানে আমরা যেতে পারছি।


খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে মারিশ্যা রাস্তার উপর দিয়ে কাচালাং পার হয়ে মাচালাং হয়ে রুইলুই পাড়ায় রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন সাজেক ভ্যালীতে আসতে হবে।




সাজেকে কি আছে যা নিয়ে এত হাউ কাউ?

সাজেকের পাহাড় চূঁড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের অদ্ভুত দৃশ্য দেখে সকল ক্লান্তি ও কষ্ট নিমিষেই মিলিয়ে যায় ।







প্রকৃতির এতো সুন্দর রূপ আগে কখনও দেখিনি। সাজেকের এই প্রাকৃতিক রূপের সাথে পাংখোয়া ও লুসাই আদিবাসীদের বৈচিত্রময় জীবন যাত্রা দেখে আরও বিস্মিত ও হতবাক হয়ে যাই। উঁচু মাচার ঘরে গাছের গুড়ি কেঁটে বানানো সিঁড়ি, ঘরের ছাউনী বাঁশের পাতার। 


ঘরের সামনে ফুলের বাগান, মাঝে মাঝেই ক্যাকটাস ও অর্কিড শোভা পাচ্ছে রুইলুই গ্রামটি। ঢালুতে ২/৩ শত বছরের পুরোনো বিশাল বিশাল গাছ। বাড়ির অদূরেই অসংখ্য কমলা বানান। এরই মাঝে চোঁখে পড়ে অসংখ্য ঔষুধী গাছ-গাছড়া। একেবারে ঢালুতে যেদিন তাকাই সেদিকই লক্ষ কোটি বাঁশ আর বাঁশ। 



সেই ঘর থেকে একে একে বেড়িয়ে আসছে আদিবাসীরা। কেউ পানি আনতে, কেউ বা জুম ক্ষেতে উৎপাদিত ফসল আনতে ব্যস্ত তারা। পরনে তাদের জিন্সের প্যান্ট,গায়ে হাতা কাঁটা সট গেঞ্জি, শার্ট, স্টাট ইত্যাদি। লাবন্যময়ী রূপসী মেয়েদের দেখে মনে হয়েছে  বলিউডের কোন নায়িকা এখানে শুটিং-এ এসেছে। 




পোষাক দেখে মনে হয়েছে এ যেন বাংলাদেশের ভেতর এক খন্ড ইউরোপ। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘোরাঘুরি এক পর্যায়ে জানাগেল তাদের ধর্ম খৃষ্টান। মিজো ভাষায় তারা কথা বললেও ইংরেজি তাদের অক্ষর ইংরেজী। লুসাই ও পাংখোয়া আদিবাসীরা বাংলা ভাষার চেয়ে ইংরেজিতে কথা বলতেই বেশি পছন্দ করে।



মাচালাং বাজারে প্রতি শুক্রবার হাট বসে, চাইলে এখানে ঘুরাঘুরি করতে পারেন। বাজারে সব ক্রেতা বিক্রেতা সবাই পাহাড়ী, ২/১ জন বাঙালি। সাজেকের স্থানীয় হেডম্যান এর নাম লালথাংগা লুসাই, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নাম চংমিং থাংগা লুসাই।



সাজেকের উচ্চতম পাড়ার নাম কংলাক পাড়া (কমলক), আসার পথে অনেক কমলা বাগান আছে। কমলক রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় সিপ্পুতে অবস্থিত। 




সেখানকার উপজাতিরা পাঙ্কু সম্প্রদায়, অধিকাংশই শিক্ষিত এবং পোশাকে সেই রকম আধুনিক। পাকা পেপে আর কলা খেয়ে পেট ঠান্ডা করেছি আমরা। পেপে আর কলা খাওয়ার সময় দেখলাম তাদের লাইসেন্স করা বন্দুকে তেল দিচ্ছে তারা, একটু পরই দুইজন হরিণ শিকারে বেরিয়ে পড়ে। 



কাংলাক থেকে আর সামনে না যাওয়াই ভালো কারন  অপহরণের আশংকা রয়েছে। 



এখানে কফির চাষও হয়। তাদের চাষের কফি খেলাম। 



আর বেশি মজা পেয়েছি ২৫ ডিসেম্বর রাতে গির্জায় লুসাইদের নাচ গান বাজনা, রাতে ফানুস উড়ানো। আর ভোর বেলায় মেঘের নদী। 


ধন্যবাদ আমার সাথে যাওয়া ফ্রেন্ডদের, যারা আমার উপর ব্লাইন্ড ট্রাষ্ট করে সাজেকে গিয়েছে। জানতাম না কি আছে সেখানে, গিয়ে সব ম্যানেজ করেছি আমরা সবাই, ফয়সালকে থ্যাংকস সব কিছু ম্যানেজ করার জন্যে। আর আমাদের গাইড ভাই মোবারককে স্পেশাল  থ্যাংকস বাকি সব ম্যানেজ করার জন্যে-আর একদিনে সব কিছু দেখানোর জন্য, এরকম গাইডিং কেউ আগে করে নাই ভাই। আর মোহাম্মাদ আলী ভাইয়ের সহযোগিতা কোনদিন ভুলবো না। 





এক নজরে সাজেক, খাগড়াছড়ি ট্যুর।
কিভাবে গেলাম? কি কি করলাম সব মনে পড়ে গেল দেখে। রাতে ঢাউশ আকারের ফানুস উড়ানো, রাস্তার চারপাশের ছবি, ব্লা ব্লা।
ভিডিও শেয়ার করার জন্যে Khan Shajal -কে Thanks

আবার যেতে চাই সাজেক। আবার যাবো। কথা দিলাম। 

FOR ANY RESERVATION PLEASE CONTACT: 

ALO RESORT: 01755556699




RUNMOY RESORT: 01859025694






01783969200
01769302370



ROCK SAJEK ONLINE RESERVATION LINK: 




ROCK Tent

Presently at Sajek near Runmoy four ROCK Tents are available for reservation to accommodate the visitor. These are named as ROCK Tent (1,2,3,4). Maximum 4 Persons are allowed to stay in each Tent.



PAYMENT RELATED INFORMATION:

Giri Thebar at Khagrachari
Bank Name: Trust Bank Limited, Khagrachari
Account Name: Giri Thebar Fund, Khagrachari.
Account No: 00630210001269
Bank Name: Dutch Bangla Bank Limited.
Account Name: Giri Thebar Fund.
Account No: 1331100019290
bkash: 01866384494

Runmoy at Sajek
Bank Name: Trust Bank Limited, Khagrachari
Account Name: Runmoy Fund, Sajek.
Account No: 00630210003061
bkash: 01862011852

Sajek Resort
Bank Name: Trust Bank Limite, Khagrachari
Account Name: Sajek Resort
Account No: 0063-0310011407 

Front Desk
Sajek Resort: 01864664786
Giri Thebar: 01859025694
Runmoy: 01865688774

Here are some Sajek's Resorts/ Cottage owner mobile number! Hope it will help

সাজেক নিয়ে আমার আগের ব্লগ পড়ুনঃ  নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পার্বত্য ভ্যালি সাজেক

-২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

সাজেক নিয়ে  Hello Tech এর উদ্যোগে একটি এন্ড্রয়েড এপ্স বানানো হয়েছে, চাইলে ডাউনলোড করতে পারেন নিচের লিঙ্ক থেকে। 


এপ্স ডাউনলোড লিঙ্কঃ Sajek Tour Guide (সাজেক গাইড)



সাজেক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে এপ্লিকেশনটিতে।
  • কিভাবে যেতে হয়
  • কোন যাতায়াতের ভাড়া কেমন
  • সর্বমোট বাজেট কেমন লাগতে পারে
  • কোথায় থাকার ব্যবস্থা আছে
  • পাহাড়ি মাচায় থাকতে হলে কি করতে হবে
  • ট্যুর গাইডের জন্য
  • রিসোর্ট বুকিং এর জন্য কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে –এই তথ্য গুলো আছে এপ্লিকেশনটিতে।

Monday, December 15, 2014

প্রথম বার বান্দরবন ভ্রমনের Tour Tips


আমি প্রথম বান্দরবন যাই ২০০৭ এ। তেমন কিছুই জানতাম না। Facebook ছিল না, ToB ও ছিল না। প্রথমবার এসে মেঘলা, নিলাচল/ টাইগার হিল, স্বর্ণ মন্দির, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক দেখে ওয়াওওয়াও করতে থাকি। এগুলো সবই মুলত শহরেরআশেপাশে। সেবার ওইগুলো দেখেই পেটভরা গল্প নিয়ে ঘরেফিরি।



২য় বার এসে কেক্রাডং “জয়” করে বিজয়ী বেশে ঘরে ফিরি
এরপর বেশ কয়েকবার বার বান্দরবন গেছি, অনেক কিছুই দেখেছি। তবে আরও অনেককিছু এখনো দেখার বাকি রয়ে গেছে।

শুধু মেঘলা, নিলাচল/ টাইগার হিল ইত্যাদি জায়গা দেখতে চাইলে পরিকল্পনা করবেন এভাবে- ১ম দিন সকালে পৌঁছে ফ্রেশহয়ে নাশ্তা করে মেঘলা, নিলাচল/ টাইগার হিল, স্বর্ণ মন্দির এসব দেখতেপারেন। ২য় দিন একটা জীপ ভাড়া (টাকা ২০০০/৩০০০) করে শৈলপ্রপাত, নীলগিরি ঘুরে আসেন।

তবে বান্দরবন এর আসল ঐশ্বর্য দেখতে হলে আপনাকে আরও একটু ভিতরে ঢুকতেহবে। ২/৩ দিন পাহাড়ে হাঁটাহাঁটিকরতে হবে। আমি এখন সেই পথের কথা বলব।

দিন ১ –বান্দরবনশহরে পৌঁছে নাশ্তা করে একটা জীপ নিতে হবে রুমা বাজার পর্যন্ত। টাকা ২০০০/২৫০০ লাগবে। পৌছতে ঘন্টা দেড় লাগবে। সেখানে পৌঁছে গাইড নিতেহবে। গাইডের কয়েকটি সমিতি আছে। যেকোনো একটা থেকে একজনগাইড নিতে হবে। কেওক্রাডং পর্যন্ত গেলে দৈনিক ৪০০ করে মোট ১২০০টাকা লাগবে। জাদিপাই গেলে প্যাকেজ ২০০০/২৫০০ টাকার মত। তাদের দেয়া ফর্ম পুরনকরে আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে সেখানে নাম এন্ট্রি করতে হবে। তারপর দ্রুত গাইডের সাথেগিয়ে জীপ ভাড়া করতে হবে বগা লেক যাওয়ার জন্য। ভাড়া ২০০০ টাকা। তবে বর্ষাকালে গাড়ি বগা লেকপর্যন্ত যায় না।

বগা লেকে ওঠার শেষ রাস্তাটুকু পার হতে অনেক কষ্ট হবে। খাড়া পাহাড়ে উঠতে হবে। আসলে এই জায়গাটুকু পারহতেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় সবার। কারন, সারারাত জার্নি করে, হইচই করে সবাই খুব ক্লান্ত থাকে। একারনেই কিছু মানুষ বগাউঠেই সিদ্ধান্ত নেয় আর আগাবে না। এটা ভুল সিদ্ধান্ত। আমি অনেক বাঘা বাঘা ট্রেকারদেরজিজ্ঞাসা করে দেখছি। ট্রিপের প্রথম দিন বগায় উঠতে সবারই অনেক কষ্ট হয়। ২য় দিন থেকে আর এত কষ্টহবে না।

বগায় পৌঁছে সিয়াম দিদি/ লারাম বা অন্য কারও কটেজেউঠতে হবে। কটেজ আগে থেকে ঠিক করে রাখা ভালো। এরপর লেকে গোছল করে বাকি দিনরেস্ট। এখন যেহেতু রুমা যেতে নৌকা লাগে না সেহেতু বেলা ১১/১২ টার মধ্যে বগায়পৌঁছে অনেকেই আরও সামনে এগিয়ে যায়। তবে যারা প্রথমবার যাচ্ছে, তাদের বগায় ১ম রাত থাকাউচিৎ। স্থানটা অনেক সুন্দর। (এখানে সেনেটারি টয়লেটআছে)।

দিন ২ (আয়েশি ভ্রমন) – ভোরে উঠে খিচুরি+ ডিম ভাজি খেয়ে ভোর ৫.৩০ টার মধ্যেই রওনা হতেহবে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। পথে চিংড়ি ঝর্না দেখতে হবে। ঝর্নার উপর পর্যন্ত গিয়েনা দেখলে কিন্তু বিরাট মিস। আগে পরে আরও কিছু ঝর্না পড়বে। মোট ৩/৩.৫ ঘণ্টা হাটার পরে পাবেন কেওক্রাডং। বাংলাদেশের “সর্বচ্চ” (সরকারি তথ্য মতে) পাহাড়।
লালার হোটেলে দুপুরেরে খাবার খেয়ে আবার ফিরতি পথে বগা।

অথবা দিন ২ (একটুখানিএডভেঞ্চার ভ্রমন) – ভোরে উঠে খিচুরি+ ডিমভাজি খেয়ে ভোর ৫.৩০ টার মধ্যেই রওনা হতে হবে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। পথে চিংড়ি ঝর্না দেখতেহবে। ঝর্নার উপর পর্যন্ত গিয়েনা দেখলে কিন্তু বিরাট মিস। আগে পরে আরও কিছু ঝর্না পড়বে। কোন ঝর্নাতেই ১০/১৫ মিনিটেরবেশি সময় দেয়া যাবে না। মোট ৩/৩.৫ ঘণ্টা পরে পাবে কেওক্রাডং। বাংলাদেশের “সর্বচ্চ” পাহাড়। চুড়ায় ওঠার আগেই লালার হোটেলে দুপুরের খাবারঅর্ডার ও রাতে থাকার বুকিং দিয়ে দিবেন।
তারপরে ১০ টার ভিতরে দুপুরের খাবার খেয়ে পাসিং পাড়া হয়ে জাদিপাইপাড়া হয়ে জাদিপাই ঝর্না। কেওক্রাডং থেকে জাদিপাই যেতে কোন পাহাড়ে ওঠানাই, শুধু নামা আর নামা। ঘণ্টা ২/২.৩০ লাগবে পৌছাতে। শেষ ২০০ ফিট সাবধানে নামতেহবে। ৫০ ফিট পাটের মোটা দড়ি/কাছিসাথে করে নিয়ে গেলে এখানটায় নামতে সুবিধা হবে। লোকে বলে জাদিপাইনাকি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্না। কথাটির সাথে আমিও দ্বিমত নই। দেখলেআপনিও বোধ করি দ্বিমত করবেন না।
এখানে ঘণ্টা খানেক থেকে আবার ফিরতে হবে। আমরা ঐদিনই বগায় ফিরেএসেছিলাম। তবে সেটা বেশি কষ্টকর হতে পারে। আপনারা কেওক্রাডং এসেলালার হোটেলে ঐ রাত থাকবেন। (এখানে সেনেটারি টয়লেট আছে)।

দিন ৩ –অবশ্যইসূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠবেন। কেওক্রাডং এর চুড়া থেকে সূর্যোদয় অনেক বেশি সুন্দর। নাশ্তা করে ফিরবেন বগা। সেখান থেকে জীপ স্ট্যান্ডেগিয়ে আগেই ফোনে ঠিক করে রাখা জীপে করে রুমায় ফিরবেন।

১২ টার মধ্যে রুমায় পৌঁছে দুপুরের খাবার খেয়ে ট্রলার নিবেন রিঝুকফলস পর্যন্ত। ৮০০/১০০০ টাকা নিবে। ৩০/৪০ মিনিট লাগে যেতে। রিঝুক দেখে রুমা ফিরেআবার জীপে করে বান্দরবন।

বগাথেকে ঝিরিপথে হেঁটেও রুমা ফেরা যায়। ৬/৭ ঘণ্টা লাগে। পথটা অসাধারন সুন্দর।
রুমা থেকে বান্দরবন ট্রলারে করেও ফেরা যায়। ৩/৪ ঘণ্টা লাগবে। ৪০০০/৪৫০০ টাকা লাগতেপারে। ফিরতি পথে ৪০/৫০ কিমিসাঙ্গু দেখতে অনেক ভালো লাগবে।

এই পরিকল্পনায় ৩ দিন ঘুরে আসলে আর শৈলপ্রপাত, নীলগিরি, চিম্বুক, মেঘলা ইত্যাদি জায়গায়যাওয়া অর্থহীন। কেওক্রাডং, জাদিপাইর কাছে এগুলোকেশিশুপারক মনে হবে।

এই ৩ দিনের টুরে আরও কিছু মশলা দেয়া যায়, তবে প্রথমবার হিসেবে সেটাবাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।

অবশ্য পালনীয় কর্তব্য –

১) ভালো, মজবুত ব্যকপ্যাক নিবেন। হাতব্যাগ/ লাগেজ এসব চলবেনা, চলবে না¸ চলবে না।
২) পুরো টুরে নিজের ব্যাগ নিজের কাধে রাখতে হবে। পাহাড়ে ওঠার সময় মেকাপবক্স/ পারফিউম ইত্যাদি ফেলে দিতে হবে ওজন কমাতে। অতএব, কাপড় মাত্র ২ সেট নিবেন। অন্যান্য জিনিস যাই নিবেনভেবে নিবেন। অযথা ব্যাগ ভারী করলে পরে কাঁদতে হবে।
৩) ভালো, মজবুত স্যান্ডেল নিবেন। মাটিতে ভালো গ্রীপ করে, পিছলে যায় না এমন স্যান্ডেলনিবেন।
৪) সঙ্গে সবসময় আধা/এক লিটার পানি, সামান্য কিছু হাল্কা খাবাররাখবেন।
৫) কলার পটাশিয়াম পেশির জন্য উপকারী। পাহাড়ে উঠলে পেশির উপরঅনেক চাপ পরে। অতএব, বান্দরবন গেলে বান্দরের মত কলা খাবেন।
৬) বেশি স্যালাইন খেলে রক্তচাপ বাড়ে, ঘাম বাড়ে ফলে আরও বেশিপানি শূন্যতা সৃষ্টি হয়। অতএব, সারাদিন চলার পথে বেশি স্যালাইন খাবেন না। পানি খাবেন। অনেক তৃষ্ণা পেলেও একবারেবেশি পানি খাবেন না। হটাত পেট ভারী হয়ে গেলে হাঁটতে পারবেন না।
৭) মশা প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই Ododmos লোশন নিবেন।
৮) হাটার সময় ফুটবলারদের মত আংলেট, নী-ক্যাপ পড়বেন।
৯) টর্চ নিবেন। কম কম জ্বালাবেন। চার্জ শেষ হলে চার্জ দেয়াঝামেলা।
১০) প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন। অবশ্যই, অবশ্যই। যত দেরিতে রওনা হবেন, রোদে তত বেশি কষ্ট হবে। অলস কেউ থাকলে তাঁকে কক্সবাজারপাঠিয়ে দিন। বান্দরবন তার জন্য না।
১১) জোঁকের জন্য সবার সঙ্গে সামান্য লবন রাখবেন। জোঁক লাগলেই অযথা চেঁচামেচিনা করে আপনার পাশে জনকে লবন দিতে বলুন। জোঁক মরে যাবে।
১২) দল ১০ জনের হলে ৫ জনের ২ টা দলে হাঁটবেন। কেও যেন দলছাড়া না হয়েযায়।
১৩) ক্যাপ পড়বেন সবাই।
১৪) ছাতা/ রেইনকোট নিবেন।
১৫) ব্যাকপ্যাক কাভার নিবেন সবাই। বা সকল জিনিস বড় পলিথিনেভরে তারপর ব্যাকপ্যাকে ভরবেন।
১৬) সবাই ১টা করে পিঠে ঝুলানর মত দড়ি দেয়া কাপড়েরএক্সট্রা  ব্যাগ নিবেন ।
১৭) জ্বর, পেই কিলার,আমাশা, গ্যাস্ট্রিক, স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেটইত্যাদি নিবেন।
  
 এবং দয়া করে

১৮) বিস্কুট/ চিপস/ চানাচুর ইত্যাদির প্যাকেট বা প্লাস্টিকের বোতল, অপচনশিল বস্তু ফেলবেন না যেখানে সেখানে। যেসব পাড়ায়ডাস্টবিন আছে সেখানে ফেলুন। না পারলেপুড়িয়ে ফেলুন।

________________________________________________________________

Info from "Proactive Bappy"

যারা বান্দরবান যেতে চান তাদের জন্য কিছু জরুরী ফোন নাম্বার

চান্দের গাড়ীঃ জিয়া ড্রাইভারঃ ০১৮১২৫৭২৬৯১ ( ৪/৫ হাজার টাকা লাগে সারাদিন )।
হোটেল সাঙ্গুঃ ০১৫৫৬৫২৯৫৮৭ (৫০০ থেকে ১০০০ টাকা প্রতি রাত।দরাদরি করে নিবেন। হোটেলের মান খুব ভালো ) ।
হোটেল নিলগিরিঃ ০১৫৫৮৪২১৩১৯ ( ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা প্রতি রাত, হোটেলের মান মোটামোটি ,ভাই ব্রাদার মিলে থাকতে পারবেন আর কি!)
যদি ৫০-৬০ জন গ্রুপ হয়ে যান তাহলে খাবার এর ব্যপারে যোগাযোগ করতে পারেন রুপসি বাংলা রেস্তোরায় ; ০১৮৪৯৮৮১৫৪০ (খাবারের মান ভালো)

বান্দরবন সিটিতে কোথায় থাকবেন তার হোটেল লিস্টি দিয়ে দিলাম কিছু-
হোটেল ফোর স্টার : (বান্দরবান সদর)
সিঙ্গেল ৩০০ টাকা, ডাবল- ৬০০, ট্রিপল ৯০০ টাকা, এসি ডাবল- ১২০০ টাকা।, এসি ট্রিপল ১৫০০ টাকা।
Phone: 0361-63566, 0361-62466, 01813278731, 01553421089

হোটেল থ্রী স্টার : এটি বান্দরবান বাস স্টপের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ী এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়া হয়। এটি ৮/১০ জন থাকতে পারে ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০ টাকা, এসি-৩০০০ টাকা। বুকিং ফোন: থ্রী স্টার এবং ফোর ষ্টার হোটেল মালিক একজন, মানিক চৌধুরী-০১৫৫৩৪২১০৮৯।

হোটেল প্লাজা বান্দরবান: (সদর) Hotel Plaza Bandarban
Single 400tk, Double 850tk, AC 1200tk.
Booking Phone: 0361-63252

হোটেল গ্রিন হিলঃ (বান্দরবান সদর) Hotel Green Hill
Single 200tk, Double 350tk, Triple 500tk
Phone: 0361-62514, Cell: 01820400877

হোটেল হিল বার্ড (বান্দরবান সদর) Hotel Hill Bird
Single 250tk, Double 400tk, Triple 550tk
Phone: 0361-62441, Cell: 01823346382

হোটেল পূরবী (বান্দরবান সদর) Hotel Purobi
AC Deluxe 1400tk, AC Room 1200tk, General Single 259tk,
General Double 460tk, General Triple 600tk, General Couple 400tk
Phone: 0361-62531, Cell: 0155 6742434

Wednesday, December 10, 2014

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পার্বত্য ভ্যালি সাজেক


সাজেক ইউনিয়ন (ইংরেজি: Sajek Union), বাঘাইছড়ি উপজিলার রাঙামাটি জিলায় আয়তন: ৪৩,৭৭৬ একর (বর্গ কিলোমিটার)

সাজেক ইউনিয়নর সাক্ষরতার হার-২১.%। বাঘাইছড়ি উপজেলার সবচেয়ে বড় দূর্গম ইউনিয়ন সাজেক উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে ইউনিয়নটির অবস্থান। ৬০৩ বর্গমাইল আয়তনের ইউনিয়নে টি উপজাতীয় সম্প্রদায়ের বসবাস। চাকমা,ত্রিপুড়া,পাংখুয়া লুসাই। এদের মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় বেশি। এরপর ত্রিপুরা, লুসাই পাংখুয়া সম্প্রদায়ের অবস্থান। তাদের সহঅবস্থানে বসবাস হলেও নেই পারস্পরিক বোঝাপারা। এক সম্প্রদায় আরেক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ। বিরোধের জের ধরে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষও হয়েছিল। তারা স্ব স্ব সংস্কৃতি পেশা নিয়ে স্বাধীন ভাবে থাকতে বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করে পাংখুয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা এখনও তীর ধনুক বর্লম দিয়ে পশু শিকার করে। লুসাই সম্প্রদায়ের লোকেরা লেংটি (ধুতি) পড়ে এখনও। তবে চাকমা ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকেরা অন্য দু সম্প্রদায় থেকে শিক্ষিত হওয়ায় তাদের মধ্যে একটু আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে






আজ দুইটা ভ্রমন কাহিনী শেয়ার করছি সাজেক নিয়ে, প্রথমটা সেপ্টেম্বর-, ২০০৮ আল-ফারুক আযম, সাজেক থেকে ফিরে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পার্বত্য সাজেক আমাদের দেখিয়েছিলেন, তারপর ঘুরে এসে লিখেছেন জাভেদ হাকিম ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সাজেক ভ্যালির প্রান্তরে
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পার্বত্য সাজেক আল-ফারুক আযম, সেপ্টেম্বর-, ২০০৮
অনেকদিন থেকেই দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ভারতের মিজোরাম রাজ্য সন্নিহিত সাজেক উপত্যকায় যাবার ইচ্ছা ছিল। তাদের নিয়ে নানা রূপকথার মত গল্প শুনেই সেখানে মন টেনেছে বার বার। বৈচিত্র্যময় উপজাতি জীবনধারা আর নৈসর্গিক অপরূপ সৌন্দর্য আমাকে হাতছানিতে ডেকেছে। কিন্তু দেশের মানচিত্রে গ্রথিত এই সাজেক উপত্যকাটি এতই দূর্গম অরণ্যাবৃত যে ইচ্ছে করলেই সেখানে যাওয়া যায়না। এখানে বৃটিশ শাসনামল থেকেই উপেক্ষা আর অবহেলার মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে এখানকার সহজ, সরল আদিবাসীদের জীবন যাত্রা। অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ এই জনপদের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র উপায় পায়ে হাটা পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা উঁচু-নিঁচু মেঠ পথ। সেখানে টেলিফোন, মোবাইল, -মেইল, ইন্টারনেট তো দূরের কথা, জরুরী প্রয়োজনে এখানে কখনই ডাক পিয়ন যায়নি। এখানকার মানুষের জন্য পোষ্ট অফিস ৫০ কিলোমিটার দূরে মারিশ্যা বাজারে অবস্থিত। সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় এই প্রথমবারের মত সাজেক পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। যা এখনও বাস্তবায়নাধীন। এই সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলে এখানকার আদিবাসীরা তাদের জুমের ফসল ধান, তিল, তিসি, মিষ্টি কমলা, তরু-তরকারি অনাসায়ে বাজারজাত করতে পারবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। একমাত্র সড়ক যোগাযোগের অভাবে জীবন জীবিকার সন্ধানে এখানকার মানুষ পারি জমাতো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মিজোরাম রাজ্যের বিভিন্ন হাট-বাজারে। সাজেকের মানুষের উঠা-বসা, হাট-বাজার, বিয়ে-সাদি, লেখা-পড়া, যাওয়া-আসা সবই চলে মিজোরামের সাথে। এসকল কারণেই অনেকদিনের কৌতুহল ছিল স্ব চোঁখে দেখবো, কেন তারা স্বদেশের মাটি আঁকড়ে ধরে ভীন দেশে পারি জমায়
সেই থেকেই সাজেকের ভিন্ন জীবন নিয়ে খোঁজ নিতে শুরু করি। পার্বত্য চট্টগ্রামে আরও ১০টির মত আদিবাসীর বসবাস সত্বেও সাজেকের এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন যাপন একেবারেই ভিন্ন বৈচিত্র্যময়। সাজেকের পাংখোয়া লুসাই উপজাতিদের মিজো জাতি গোষ্ঠী বলা হয়। মূলতঃ এরূপ ১০ ভাষা-ভাষি আদিবাসীকে মিজো জাতি হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই, কংলক, শিয়ালদাই, বেথলিং, তৈচৈ, ওল্ড লংকর-নিউ লংকর মৌজায় পাংখোংয়া লুসাই উপজাতিরা বসবাস করে থাকে। এই মিজোদের চাল-চলন, আচার ব্যবহার উঠা-বসা সবই ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সংস্কৃতির সাথে মিল খুজে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ সাজেকবাসী গান শোনে ইংরেজি মিজো ভাষায়। মাঝে মাঝে হিন্দী ব্যান্ডের গানও শোনে তারা। কথা বলে মিজো ইংরেজি ভাষায়। লেখা-পড়া ইংরেজিতে হয়। মিজোরামের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যে লেখা-পড়া হয় তা ইংরেজি অক্ষরে। মিজোদের নিজস্ব অক্ষর ইংরেজিতে। মিজোরামের ইংরেজিতে এক্স, ওয়াই, কিউ অক্ষর নেই। সে জন্য মিজোরা ইংরেজি শিখতে পড়তে বলতে পারে খুব দ্রুত। তবে মিজো কথ্য ভাষার সাথে ইংরেজি ভাষার মিল নেই বললেই চলে
সাজেকবাসীর ঘুম ভাংগে ইংরেজি গান শুনে বাংলা গান তেমন বুঝেনা বিধায় ইংরেজির প্রতি আকর্ষণ বেশি হিন্দি ভাষাও কম বুঝে ওয়েষ্টার্ন কালচারে অভ্যস্ত খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী লুসাই, পাংখোয়াদের পোষাক পরিচ্ছেদ, আচার ব্যবহার, মিজো ইংরেজিতে কথা বলার ধরণ দেখে মনে হবে সাজেক উপত্যাকা যেন বাংলাদেশের বুকে একখন্ড ইউরোপ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের এই জনপদের দৃশ্যপট দেখে কেউ আর কষ্ট করে টাকা খুইয়ে ভারত, নেপাল, ভূটানে যেতে চাইবেনা

কিন্তু ভীনদেশে যাওয়া যতই না সহজ সাজেক যাওয়া তত সহজ নয়। ইন্সার্জেন্সি, কাউন্টার ইন্সারজেন্সির কারণে নিরাপত্তার অভাবে এতদিন সেখানে যাওয়া হয়নি। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর পার্বত্য এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় পার্বত্য জেলাগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তবে সাজেক এলাকায় অবাধ যাতায়াতের উপর এখনও পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার অদৃশ্য প্রাচীর রয়েছে। সেখানে ইচ্ছে করলেও যে কেউ যে কোন মূর্হুতে যেতে পারে না। এই অদৃশ্য প্রাচীর ভেদ করে অজানাকে জয় করতে আমরা কয়েকজন সাজেকে যাবার পরিকল্পনা করি। সাজেক আবিশ্বারের অভিপ্রায়ে যাত্রা হল শুরু……… রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের একদল দামাল ছেলের আগ্রহ তারাও সাজেক যাবে। কোন পথে যাবে তা তাদের ছিল অজানা। দলটি প্রথমবার এসেছিল খাগড়াছড়িতে অলৌকিক দেবতা পুকুর, রহস্যময় আলুটিলা গুহা দেখতে। এরপর তারা আবার আসে তবলছড়ির অপরূপ ঝর্ণাটিলা দেখতে। সেবারই তারা সাজেক যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিন্ধান্ত নেয়। ঢাকায় ফিরে তারা আমার সাথে ফোনে যোগাযোগও করে যথারীতি। সাজেক জয় করার অভিপ্রায় নিয়ে অবশেষে ১০/১৫ জনের বিশাল দল বীরের বেশে খাগড়াছড়ি আসে। ইতিপূর্বে তারা দেশের সর্বোচ্চ পর্বতমালা বান্দরবানের তাজিংডং, কেউক্রডংসহ অনেক উঁচু পর্বত জয় করেছিল। খাগড়াছড়ি বাজার থেকে কাক ডাকা ভোরে ঝটপট নাস্তা খেয়ে একটি চাঁদের গাড়ীতে করে আমরা বেড়িয়ে পরি স্বপ্নে দেখা সাজেকের উদ্দেশ্যে। আঁকা-বাঁকা উঁচু-নিঁচু রাস্তার দুপাশে পাহাড়ি সাদা কাঁশ বন পাড়ি দিয়ে, দূরে সবুজের ঢেউ তোলা দিগন্ত ছুতে তীরের বেগে আমাদের জীপটি ছুটছে। খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে ২৫ কি.মি. দূরে দীঘিনালা সেনা জোনের সামনে ধীরে চলুন, সামনে সেনা ক্যাম্প লেখা দেখে পথে প্রথম সামান্য ধাক্কা খেলাম। সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সামনে প্রথমে আমাদের গতীরোধ করা হয়। কোথায় যাচ্ছেন? উত্তরে বললাম বাঘাইছড়ি। আমাদের ব্যাগ তল্লাশীর পর ছেড়ে দেয়া হল। এরপর আরও কি.মি. যেতে না যেতেই জোড়া ব্রীজ এলাকায় আরেক দফা তল্লাশী
কোথায় যাচ্ছেন? উত্তরে বললাম বাঘাইছড়ি। তেমন তল্লাশী ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর আরও প্রায় ১০ কি.মি. দূরে বাঘাইহাট সেনাবাহিনীর একটি জোনের সামনে রাস্তায় বাঁশ দিয়ে আটকে দেয়া হয় আমাদের জীপটিকে। খাগড়াছড়ি থেকে ৩৫ কি.মি. আসার পর বাঘাইহাট সেনা জোনের সামনে এসে জানতে পারি এখান থেকে সাজেকের মূল লক্ষ্যস্থলের দূরত্ব ৪০ কি.মি. উলে খ্য, বাঘাইহাট জোনটিও কিন্তু সাজেক ইউনিয়নের অর্ন্তগত। এই জোন থেকে নির্দেশ আসলো সকলের ব্যাগ তল্লাশী করতে হবে। ব্যাগ তল্লাশী করা হলো। এরপর জিজ্ঞেস করা হয় কোথায় যাবেন? উত্তরে এবারই প্রথম বললাম সাজেক যাবো। সাজেকের কথা বলতেই সেনা সদস্যরা হতচকিত হয়ে বলেন কি? সাজেক! পারমিশন আছে? আমরা বললাম কিসের পারমিশন। এরপর শুরু হয় হায়ার অথরেটির সাথে ওয়ার্লেস যোগাযোগ। আমাদের আটকে দিয়ে বলা হয় বিগবস জোন কমান্ডার সাহেব আপনাদের কয়েকজনকে জোনে যেতে বলেছেন, কথা বলবেন। সবাইকে রেখে আমি রুবেল, লিপটন ভাই উপরে গেলাম। তৎকালীন জোন কমান্ডার বললেন, সাজেক যাবেন কেন? আমরা বললাম বেড়াতে। কমান্ডার বললেন, সেখানে কোন বাঙ্গালী যেতে পারে না। বললাম কেন? উত্তরে বললেন, নিরাপত্তার অভাবে। নিশ্চিত অপহরণ অথবা মৃত্যুর মূখে আপনাদের ঠেলে দেয়া ঠিক হবে না। তিনি উদাহরণ টেনে বললেন, বছর খানে আগেও সাজেকের গঙ্গারাম ব্রীজ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে নির্মানকালে সেনা উপস্থিতি কয়েক মিনিটের মধ্যে ছিল না সুযোগে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মূখে ৭জন নির্মাণ শ্রমিককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। দীর্ঘ ৩৫দিন পরে সেনাবাহিনী কমান্ড অপারেশন চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এছাড়াও খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কের কালাপাহাড়ে তিন বিদেশী প্রকৌশলী অপহরণের কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আপনাদের অপহরণ করা হলে পুরো পার্বত্য এলাকার সেনাবাহিনী ব্যস্ত হয়ে পরবে। দেশের অনেক ক্ষতি হবে
এই দূর্গম বিশাল রিজার্ভ বনভূমি পাহাড়ি এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা তেমন জোরদার করা সম্ভব হয়নি। শুধু সাজেকের রুইলুই কংলাক মৌজার মাঝখানে একটি বিডিআর ক্যাম্প রয়েছে। বেথলিং শিয়ালদই মৌজায় বিডিআর থাকলেও পুরো এলাকা নজরদারীতে আনা বাস্তবেই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। আমাদের মধ্যে রুবেল ভাই বললেন সাজেক কি বাংলাদেশের অংশ নয়? উত্তরে কমান্ডার বললেন, অবশ্যই বাংলাদেশের অংশ। তাহলে কেন এভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছেন? উত্তরে কমান্ডার বললেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ এলাকা হিসেবে পরিগনিত হয়ে আসছে। আর সাজেক আরও বিশেষ এলাকা হিসেবে বৃটিশ আমল থেকেই প্রতিষ্ঠিত। কমান্ডার সাফ সাফ জানিয়ে দিয়ে বললেন সাজেক আপনাদের কোন ভাবেই যেতে দেয়া হবে না। বড় জোর মাচালং বাজার পর্যন্ত বাঙ্গালীরা যেতে পারে সেখানে পর্যন্ত যেতে পারেন। একথা বললেও তিনি অবশেষে তার সামনে দিয়ে মাচালং পর্যন্তও যেতে দিলেন না কারণ, আমরা মাচালং যেতে পারলে পায়ে হেটেই সাজেকের মূল লক্ষ্যে চলে যেতে পারি অশংকায়। কমান্ডারের অশংকা অবশ্য ভূল ছিল না।

আমাদের দৃঢ়তা দেখে তিনি বিশ্বাস করেছেন যে দেশের এই দুঃসাহসী ছেলেদের কোনভাবেই রুখা যাবে না। তারা সাজেক যাবেই। আলাপচারিতায় কমান্ডার অবশ্য বলেই ফেলছিলেন আপনাদের সাজেক যাওয়ার কথা শুনে আমার দেখতে ইচেছ করছে কোন সেই দুঃসাহসী ছেলেরা সাজেক যেতে সাহস করে! আমাদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে জোন কমান্ডার আমাদের যেতে দেননি। অতিথি আপ্যায়নের মধ্যদিয়ে তাঁর আন্তরিকতার যে কোন অভাব ছিল না তা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। আমরা হতাশ হয়ে ফিরে আসি বাঘাইছড়ি মারিশ্যা বাজারে। সেখানে আসার আগেই আমরা জানতে পেরেছি পানি পথে সাজেকের রাস্তা রয়েছে। এজন্য মারিশ্যা বাজারে যেতে হবে। মারিশ্যা বাজার গিয়ে আমাদের দলটি ছোট হয়ে গেল ২০ জনের দলটি ১৩ জন হয়ে গেল। মারিশ্যা বাজারে এসে সন্ধ্যার পর নৌকা ঠিক করা হলো। পরদিন সকালেই আমরা বেড়িয়ে পরবো নদীপথে সাজেকের উদ্দেশ্যে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জুননুন ভাই কয়েকজনের সাথে মারিশ্যার আমরা যে হোটেলে উঠেছে সেখানে বসে কয়েক দফা বৈঠক করলেন। মারিশ্যা বাজারের কয়েকজন

দোকানদার বললেন ভাই কোথায় যাবেন? উত্তরে বললাম সাজেক। দোকানদাররা বললো আমাদের জম্ম মারিশ্যা বাজারে সাজেক আমাদের উপজেলার একটি ইউনিয়ন সত্বেও কোন দিনই সেখানে যেতে সাহস করিনি। আপনারা কি ওখানে মরতে যাবেন? কি দরকার সেখানে যাওয়ার। সেখানে একজাতীয় উপজাতি আছে যারা মানুষ হত্যা করে খেয়ে ফেলে। এসকল কথা শুনে আমাদের মাঝে অদৃশ্য আতংক তাড়া করে ফিরতে লাগলো




সাজেক যাওয়া হবে কি হবে না জন্য দোটানায় পড়লেও গোপনে চলতে থাকে পরিকল্পনা। পরিকল্পা হয় বৌদ্ধদের একটি বনবিহারে। সেখানে আমরা সন্ধ্যার আগে আগে বেড়াতে গিয়েছিলাম। লিপটন, রুবেল, রশিদ, সিনা জুননুন ভাই মারিশ্যা বাজারে ফিরে এসে ভাগ্যক্রমে নৌকা ঘাটে সাজেকের কংলাক মৌজার হেডম্যান চংমিংথাংগার খোঁজ পান। তার সাথে পরিচয় হয়। তিনি বলেন, রাত্রে কথা হবে। একথা বলে চলে যান। রাতে আমরা কয়েকজন বেড়িয়ে পরি সাজেকের কংলাক মৌজার হেডম্যানের খোঁজে। তার সাথে দেখা হয় শহরের একটু ভেতরে একটি গীর্জা ঘরে। হেডম্যান বললেন, এতো লোক সাজেক যাবেন, বিপদ হতে পারে। অপহরণ করতে পারে চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ লোকজন। তবে আমি চাই আপনারা আমাদের ওখানে যান। আমরা তো বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকি। স্বদেশী অতিথিদের দেখা পাই না। আপনারা আমাদের ওখানে গেলে আমাদের জীবন যে কত কষ্টের তা জানতে পারবেন। এতো লোক একসাথে সাজেক গেলে বিডিআর, আর্মীরা তো সমস্যা করবে। আপনারা বাঙ্গালী আপনাদের কিছু হলে তাদের নিকট আমাকে জবাবদীহি করতে হবে। আবার মাচালং যাওয়ার পর পার্টির লোকেরা সন্দেহ করে ধরে ফেলবে। এসকল নানা কথার পরেও আমাদের অতিমাত্রায় চাপাচাপির ফলে হেডম্যান আমাদের সাথে মাচালং বাজার পর্যন্ত যেতে রাজি হলেন, কারণ পরদিন সকালে মারিশ্যা বাজারে বাঘাইছড়ি উপজেলা পষিদ কার্যালয়ে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক আসবেন সাজেকসহ উপজেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠক হবে। সেজন্যই তিনি সাজেক থেকে মারিশ্যা এসেছিলেন। রাতে খেতে বসেই আমাদের ঘিরে ধরে এক গাড়ি ভর্তি পুলিশ। আমাদের প্রতি নির্দেশ রুমে চলেন ব্যাগ চেক করা হবে। সন্দেহের মাত্রা দেখে মনে হয় যেন আমরা বাংলাদেশী নই
সাজেক যাবার কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সন্দেহের আঙ্গুলি আমাদের দিকে অতিমাত্রায় ছিল। সবার নাম ঠিকানা নিয়ে ব্যাগ চেক করে কিছু না পেয়ে আমাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হল ঢাকায় বা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি যেখানে খুশি ফিরে যান, সাজেক যাওয়া যাবে না। মধ্যরাত পর্যন্ত পুলিশের নজরদারীর কারণে আমরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে অনেককেই অন্ধকারে রেখে সিদ্ধান্ত নেই ফজরের আজান দেয়ার সাথে সাথে নৌকায় উঠে পুলিশের চোঁখ ফাঁসি দিয়ে পানি পথে মাচালং নদী দিয়ে সাজেকের উদ্দেশ্যে প্রথমে মাচালং বাজার যাবো। সিন্ধান্ত অনুযায়ী সেভাবেই রওয়ানা হলাম। আলো আঁধারীর মধ্যে মারিশ্যা বাজারের অদূরে একটি গ্রামের পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী ঘাটে গিয়ে দেখি তখনও নৌকা আসেনি। খানিক পরে দেখা গেল হেডম্যানসহ নৌকাটি আসছে। উঠে পরলাম সকলে সাবধানে। রিজার্ভ ফরেষ্টের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাচালং নদীর দুপাশে আদিবাসীদের ঘর-বাড়ি, বড় বড় গাছ পালা, নদীর পারে নানা রকম চাষাবাদ করার দৃশ্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে উঠি। জুননুন ভাইএর ক্যামেরায় বন্দি হচ্ছিল এসকল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে লালীত ছবি। আমিও আমার ডিজিটাল ক্যামেরায় কিছু ছবি বন্দি করি। এরই মধ্যে চোঁখে পরে বিশাল বড় বাঁশের চালা। আদিবাসীরা জানালো লক্ষ লক্ষ বাঁশ সাজেক রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে আসছে, নদী পথে কাপ্তাই লেক হয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলে যাবে। অনেক দূর গিয়ে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয় অবস্থায় পরি। আবার সেই বাঘাইহাট সেনা জোন। যেখান থেকে আমাদের নিরাপত্তার অভাবের কথা বলে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। অদৃশ্য ভয়, সংশয়ে সকলেই কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে গেল। নদীর পারেই সেনাবাহিনীর নজরদাবী রয়েছে
বুদ্ধি করে আমরা নৌকায় শুয়ে পরি। চেক পোষ্টকে ফাঁকি দিয়ে রক্ষা পাই। নয়তো আবারও ফেরত যেতে হতো। এবার ফেরত গেলে আর সাজেক যাওয়া হতো না। এরপর কিছু দূর গিয়ে দেখি আবারও সেনাবাহিনীর ক্যাম্প। তবে তেমন নজরদারী নেই। পোষ্ট থেকে সেনাবাহিনী আমাদের দেখতে পেলেও শ্রমিক ভেবে হয়তো কিছু বলেনি। পরে জানতে পারি ইঞ্চিনিয়াংি কোরের এসকল সেনাদের দায়িত্ব সন্ত্রাসীদের নজরদারী করা নয়, নির্মাণ কাজে সহায়তা করা স্থাপনার নিরাপত্তা সংরক্ষণ করা। ক্যাম্পের পাশে মাচালং নদীতে বেশ বড় ধরণের পাশাপাশি ২টি ব্রীজ। নব নির্মিত এই গঙ্গারাম ব্রীজ থেকেই নির্মাণ শ্রমিককে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করেছিল। যে কথা জানিয়েছিলেন জোন কমান্ডার। মাচালং বাজারে গেলেই দেখা হবে ইউপিডিএফ লোকজনদের সাথে এজন্য অগ্রিম গিয়ে নেতাদের সাথে দেখা করতেই সাজেক যাবার অনুমতি নিতেই রুবেল, লিপটন আমি হেডম্যান ব্রীজের সামনে নৌকা থেকে বিকল্প পথে রাস্তায় চলে আসি। এসেই দেখা মেলে একটি নির্জন স্থানে চায়ের দোকান। সেখানে বসে চা খাওয়ার পর্ব শেষ করতে না করতেই যাত্রীবাহী জীপ চলে আসে। আমরা জীপে উঠে দেখি জীপে কোন বাংলাভাষাভাষি লোকজন নেই। স্থানীয় আদিবাসীরাই জীপের যাত্রী। জীপটি পথে টাইগারটিলা, শুকনানন্দারাম, ভিজানন্দারামসহ কয়েকটি স্থানে সেনাবাহিনী কর্তৃক চেকিং করা হলো। জীপের হেলপারকে কানে কানে বললাম এতো চেকিং কেন? উত্তরে বললো জীপে অস্ত্র আসে তাই। কোথা থেকে আসে। বলল সাজেক থেকে। কারা আনে বলে পাহাড়িরা। আমি বললাম কই, পথে তো কোন অস্ত্র দেখি নাই বলে আগে আসতো, এখন তেমন আসে না। পথে আসতে চেঁখে পরে সবুজের প্রতি করুন নিষ্ঠুরতার প্রতিচ্ছবি। হাজার হাজার সেগুন, গামারি, কড়ই, চাপালিশ গাছ কে বা কারা কেটে নিয়ে সাবাড় করে ফেলেছে। পৌঁছে যাই মাচালং বাজারে। এখানে দেখা করি ইউপিডিএফ নেতা প্রদীপন খীসার সাথে। তার সাথে আমার আগে থেকেই পরিচয় ছিল। তিনি আমাদের সাজেক যাওয়ার অনুমতি দেন শর্ত সাপেক্ষে
সাজেকের পথে সরকারি রিজার্ভ এলাকায় ১০ নম্বর গ্রামে বসবাসরত ৩০/৪০টি চাকমা পরিবার বসবাস করে। বিডিআর এসকল পরিবারের অনেক জুমের ক্ষেত পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের সরকারি রিজার্ভ ফরেষ্ট এলাকায় বসবাসের সরকারি নির্দেশের কথা বলে তাড়িয়ে দিতে চাইছে। অথচ এই আদিবাসীরা ৬০ দশকে রাঙ্গামাটিরকাপ্তাই লেকে বাঁধ দিয়ে জল বিদ্যুতের প্রকল্প স্থাপন করায় পানিতে তাদের বস্তু ভিটা তলিয়ে যাওয়ায় উচ্ছেদ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ৮০ দশকে গেরিলা যুদ্ধের শিকার হয়েও এরা উদ্বাস্তু হয়ে যাযাবর জীবন যাপন করছে কোন মত মাথা গোঁজার ঠাই এখানে করলেও সরকারের নিষ্ঠুরমত আইনের মারপ্যাচে তাদেরকে বসবাসের ন্যুন্যতম অধিকারটুকু হরণ করার চেষ্টা চলছে। প্রতিটি রাত তাদের এখন কাটে অজানা এক আশংকায়। মাচালং বাজারে পাশে একজন চাকমা আদিবাসীর বাড়িতে রাত কাটানোর কথা থাকলেও আমি নিজেই বাঁধ সাজি। সে বাড়িতে কিছুক্ষন অপেক্ষার পর একটি কিশোর আদিবাসী জানালো পথে পার্টির লোকদের দেখা হতে পারে। টর্জ লাইট জ্বালানো যাবে না। লাইট দেখে দূর থেকে তারা সেনাবাহিনী ভেবে গুলি করতে পারে। ওদিকে আমরা এই সেনাবাহিনী বা পুলিশের ভয়েই রাতে রওয়ানা হই সাজেকের দূর্গম পাহাড়ি অরণ্য পথে। তারা আমাদের খোঁজ পেলে আর সাজেক যেতে দেবে না বার বার এই আশংকা তাড়া করে ফিরছিল
সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে আসছে এমন সময় আমরা মাচালং বাজার থেকে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। আমাদের সাথে ইউপিডিএফ দুজন সদস্য সাজেক যাওয়ার পাহাড়ি দূর্গম পথ দেখাতে সহায়তা করেন। একে তো রাত তার উপর পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা উঁচু নিঁচু রাস্তা। সমস্ত রাস্তা ঢাসা জঙ্গলে ঢাকা। মাঝে মাঝে ছড়া, ঝিরি নদী। ঝরণার পানিতে রাস্তা কখনও বা পিচ্ছিল। পুরো পথেই ক্লান্তিহীন ঝিঝি পোকার ডাক শুনে একে তো কান ঝালাপালা অবস্থা, তার উপর পাখ-পাখালী, বন্য পশু জীব যানোয়ারের হাক ডাক শুনা যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ক্লান্ত শরীরে রাস্তার পাশে একটি টং ঘরে আশ্রয় নেই আমরা ১৫জন। ক্ষুধার তীব্র জ্বালায় আমরা মাচালং বাজার থেকে আনা খাজা মজা করে গিলে ফেলি। এরপর আবার পথ চলা। যেন অজানাকে জানার অচেনাকে চেনার শ্বাসরুদ্ধকর স্মৃতি এখনও ভূলতে পারি না। আমরা অবশেষে রাত ১০টার দিকে সাজেকের ১০ নম্বর গ্রামে চাকমা পাড়ায় গিয়ে পৌঁছি। সেখানে আমাদের অভ্যর্থনা জানান, এলাকার কারবারি খুলা রাম চাকমাসহ অন্যান্য গ্রামবাসী। মাঝ রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে অবচেতনে ক্লান্ত শরীর ঘুমিয়ে পরে। সকালে সূর্য্যি মামা জাগার আগেই জুননুন ভাই পাহাড়ে সূর্যদ্বয়ের ছবি ক্যামেরা বন্দি করতে ঘুম থেকে জেগে উঠেন। ক্যামেরা বন্দি করেন এখানকার অপরূপ সব দৃশ্য। আমিও ডিজিটাল ক্যামেরায় বন্দি করি বেশ কিছু অনাবিল সুন্দর পাহাড়ের প্রথম আলোর ছবি। ছবিতে মেঘের ভেলা দেখে বিস্মিত হই খানিকটা। সকালের খাবার খেয়ে এখান থেকে আবারও পায়ে হেটে যেতে হবে আসল সাজেক পাহাড়ের চূড়ায়
আবার রওয়ানা হলাম আমরা। হাট হাটতে অদ্ভুত সব ছবি কোনটা রেখে কোনটা ক্যামেরা বন্দি করি এনিয়েই কয়েকজন ব্যস্ত। কারণে এবার ক্লান্তি অনেকটাই কম আঘাত করতে পেরেছে, যদিও বা আসল কষ্টটা এখনই বেশি ছিল। পথে পথে অসংখ্য স্থানে এমন সব রাস্তা চেঁখে পড়েছে তা লেখে বর্ণনা করা আসলেই দুস্কর। কেন না এমন রাস্তাও পেয়েছি, যেখানে বিশাল গাছই হয়েছে একটি সাঁকো। গাছের উপর দিয়ে ছড়া পার হতে হবে। কোথাও খাড়া ঢালুর বাঁকে বাঁকে পথ চলতে হয়েছে। পা পিচলে গেলে নিশ্চিত মৃত্যু এমন রাস্তাও পার হতে হয়েছে। পায়ে হাটা সরু রাস্তার দুপাশ কোটি কোটি বাঁশ রীতিমত কল্পনার ছবির মত। অনেক দূর এসে দেখা পাই সিজকছড়া নামে একটি পাহাড়ি ছড়া। পাথরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে স্বচ্ছ সাদা পানি। সেখানে আমরা মনের সুখে গোসল সেরে নেই। সেখান থেকেই মূলতঃ প্রায় ২০০০ ফুট উঁচু পাহাড় চূড়ায় আসল সাজেক অবস্থিত। আর আমাদের গন্তব্য সেখানেই। উঠতে উঠতে বহু দূর উঠেও কোন কূল কিনারা পাওয়া যায়নি। মাঝে মাঝে সূর্য্যরে আলোও হারিয়ে যায় জঙ্গলের কারণে। অবশেষে হঠাৎ দেখা মেলে একটি হেলিকপ্টারের। আমরা থমকে দ্বারাই। এতো কষ্টের পরেও কি সাজেক যেতে পারবো না আশংকা দেখা দেয়। এই গভীর অরণ্যে কেন হেলিকপ্টার তার রহস্য তখনও অজানা ছিল। আমরা ভেবেছি সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে সাজেকের পথ পারি দেওয়ায় আমাদের খুঁজতেই হয়তো বা হেলিকপ্টার এসেছে। কিছুক্ষণ পর হেলিকপ্টার ফিরে গেলেও হতাশার ঘোর তখনও কাটেনি। হাটতে হাটতে দূর থেকেই দেখা মেলে বৃটিশ আমলের বিডিআর ক্যাম্প। একজন লুসাই আদিবাসী আমাদের খবর দিলেন, আপনারা এখন সাজেক যাবেন না। বিডিআর ক্যাম্পে সিনিয়র অফিসার এসেছেন, কারণে রুইলুই গ্রামে বিডিআর টহল দিচ্ছে। একথা শুনে আমরা আরেক দফা অপেক্ষা করতে থাকি। পরে বিডিআর চলে গেলে আমরা রওয়ানা হই
অবশেষে পৌঁছে যাই স্বপ্নের সাজেক। সাজেকের পাহাড় চূঁড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের অদ্ভুত দৃশ্য দেখে সকল ক্লান্তি কষ্ট নিমিষেই ¤ ান হয়ে যায়। প্রকৃতির এতো সুন্দর রূপ আগে কখনও দেখিনি। সাজেকের এই প্রাকৃতিক রূপের সাথে পাংখোয়া লুসাই আদিবাসীদের বৈচিত্রময় জীবন যাত্রা দেখে আরও বিস্মিত হতবাগ হয়ে যাই। উঁচু মাচার ঘরে গাছের গুড়ি কেঁটে বানানো সিঁড়ি, ঘরের ছাউনী বাঁশের পাতার। ঘরের সামনে ফুলের বাগান, মাঝে মাঝেই ক্যাকটাস অর্কিড শোভা পাচ্ছে রুইলুই গ্রামটি। ঢালুতে / শত বছরের পুরোনো বিশাল বিশাল গাছ। বাড়ির অদূরেই অসংখ্য কমলা বানান। এরই মাঝে চোঁখে পড়ে অসংখ্য ঔষুধী গাছ-গাছড়া। একে বারে ঢালুতে যেদিন তাকাই সেদিকই লক্ষ কোটি বাঁশ আর বাঁশ। সেই ঘর থেকে একে একে বেড়িয়ে আসছে আদিবাসীরা। কেউ পানি আনতে, কেউ বা জুম ক্ষেতে উৎপাদিত ফসল আনতে ব্যস্ত তারা। পরনে তাদের জিন্সের প্যান্ট, গায়ে হাতা কাঁটা সট গেঞ্জি, ব্রা, শার্ট, স্টাট ইত্যাদি। লাবন্যময়ী রূপসী মেয়েদের দেখে মনে হয়েছে বোম্বের কোন নায়িকা এখানে শুটিং- এসেছে। পোষাক দেখে মনে হয়েছে যেন বাংলাদেশের ভেতর এক খন্ড ইউরোপ
বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘোরাঘুরি এক পর্যায়ে জানাগেল তাদের ধর্ম খৃষ্টান মিজো ভাষায় তারা কথা বললেও ইংরেজি তাদের অক্ষর ইংরেজী লুসাই পাংখোয়া আদিবাসীরা বাংলা ভাষার চেয়ে ইংরেজিতে কথা বলতেই বেশি পছন্দ করে এসকল ভিন্ন জীবন ধারার সাথে পার্বত্য এলাকার অনেক উপজাতিই পরিচিত নয় রাতে চংমিং থাংগা (৬২)’ সাথে কথা হয় তিনি জানান অজানা নানা কথা এখানকার বাঁশে বাঁশে নাকি ফুল ফুটেছে ফুল থেকে গোলা ধরে ধরে এসকল গোলা দেখা দেয়া মানে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ২০০৭ সালের পর কোটি কোটি ইদুর দেখা দেবে
বিশ্বাসকে লালন করে সাজেকজুড়ে দেখা দিয়েছে ইদুর বন্যা আতংক। এক জাতীয় ছোট ইদুর (মাউস) জুমের ধান, তিল,তিসি, মারফা বা শষা, মিষ্টি কুমড়াসহ সকল সফল বিনষ্ট করে ফেলবে, কারণে সাজেকজুড়ে দেখা দেবে দূর্ভিক্ষ। চারদিক খাদ্যের জন্য হাহাকার পরে যাবে। তখন এখানকার অধিবাসীদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হবে এক জাতীয় পাহাড়ি আলু। যা আকারে লম্বা এবং মাটির ভেতর থাকে। আজ থেকে ৫০ বছর আগে একবার এরূপ ঘটনা ঘটে। তৎকালীন সরকার সামান্য রেশন দিয়ে সহায়তা করেছিল। এর আগেও একবার অর্থাৎ ১০০ বছর পূর্বে ইদুরের উৎপাত এখানকার মুরুব্বিরা দেখেছে। নিয়ে প্রতি ৫০ বছর পর পর ইদুর আতংক এখানকার মানুষকে তাড়া করে ফিরে। ইদুর যে আসবে তার আলামত ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সাজেকের পৃথিবী বিখ্যাত সুস্বাদু হাজার হাজার কমলা গাছ মারা গেছে। বাঁশগুলো মরে যাচ্ছে। ইদুর জুমের চাষ বিনষ্ট করার পর পরই সাজেকের বির্স্তীন সজুব বাঁশ জ্বলে পুরে হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। ইতোমধ্যে সাজেক সংলগ্ন ভারতের মিজোরাম রাজ্যে ইদুর বন্যা আতংক দেখা দিয়েছে। সে জন্য রাজ্য সরকার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বাঁশগুলো তুলে ফেলছে। কৃষকদের জুম চাষের পরিবর্তে স্বল্প দীর্ঘস্থানী চাষাবাদে সহায়তা করছে। এছাড়াও ইদুর মারার প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা হয়েছে। সম্ভাব্য দুর্ভীক্ষ সামাল দিতে মিজোরামের খাদ্য গুদামে পর্যাপ্ত খাদ্য শষ্য মওজুত করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার সাজেকের এই দূর্ভীক্ষের বিষয়ে কিছুই জানে না। কথাগুলো শুনে সত্যিই রূপ কথার গল্প মনে হয়েছে। সাজেক নিয়ে আরও রসহ্য ঘেরা অলৌকিক নানা কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত শরীর ঘুমিয়ে পরে। সাদ সকালে সূর্য্যি মামা জানার আগেই আমি উঠে দেখি ততক্ষনে জুননুন ভাই ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত, সাজেকে প্রথম সূর্যদ্বয়ের ছবি তোলার জন্য। আমিও ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত। অন্ধকারের ঘোর কাঁটতে না কাঁটতেই হঠাৎ সাজেক মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের মাঝ বরাবর আঁকা-বাঁকা বিশাল সাগর দেখে আমরা রীতিমত হতবাগ। এই দূর্গম পাহাড়ে আবার পানি বা সাগর এলো কোথা থেকে। যতই সামনে যাই ততই দেখি সবুজের বুক চিরে সাদার আর সাদা পানির খেলা
তাৎক্ষনিকভাবে এই সাগরের কুল কিনারা আর রহস্য কিছুই বুঝতে পানিনি। কারণ আগের দিন বিকেলে তো এখানে কোন পানি, সাগর, নদী দেখিনি। তবে শুনেছি এই পাহাড়ের মাঝে একটি নদী আছে। যে নদীর নাম সাজেক নদী। মূলতঃ এই নদীর নামেই সাজেকের নাম করণ হয়েছে। এরই মখ্যে পূর্বাকাশে উঁকি দিয়ে ঝিলিক মারে সূর্য্যি মামা। সূর্য্যটার আলোক রস্মি সোজা আচড়ে পরছে সাজেকের উঁচু পাহাড়ে যেখানে আমরা দ্বাড়িয়ে রয়েছি। এমতাবস্থায় আমাদের ক্যামেরা ঝলকে উঠলো। ক্যামেরা বন্দি করলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ট সব ছবি। এতো ছবি তুলি তবুও মন যে ভরে না ম্যামোরী কার্ড শেষ হলেই মনে কষ্ট দেখা দেয়। একটু পরে তাকিয়ে দেখি এতো সাগর, মহা সাগর, নদী নয়, এতো মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে লুসাই-সাজেক পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে
সবার উপর নীল আকাশ, তার ফাঁকে লাল সূর্য্য, মাঝে সবুজ পাহাড়, নিচে সাদা মেষের সাগর আসলে এক অদ্ভুত দৃশ্য যা বাস্তবে না দেখলে বুঝানো যাবে না ফিচার, নিউজ, গদ্য, পদ্য লিখে সাজেকের এই দৃশ্যপটের অনুভূতি ব্যক্ত করা সত্যিই দুষ্কর লাল, নীল, সাদা, সবুজের খেলার সাথে আরও কত রঙের খেলা যে মাখা মাখি করে সাজেকের নির্জন পাহাড়ি আদিবাসী পলি তে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না কোন কবি এখানে আসলে যেতে চাইবেনা কোন শিল্পী এখানে আসলে শুধু ছবিই আঁকবে, ভূলে যাবে নাওয়া খাওয়া, কোন গায়ক এখানে আসলে হেরে গলা ছেড়ে দিয়ে মনের আনন্দে গাইবে গান, আর কোন লেখক এখানে আসলে মনের মাধুরী মিশিয়ে এতো দীর্ঘ দেখা লেখবে তাতেই বিরক্তি অনুভব করবে না পাঠকেরা

সাজেক ভ্যালির প্রান্তরে জাভেদ হাকিম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১২
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য উদাহরণ সাজেক ভ্যালি। ঘুরে এসে লিখেছেন জাভেদ হাকিম

সাজেক ভ্যালিতে ভ্রমণে যাওয়ার জন্য পত্রিকায় পাঠকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল। তখন থেকেই সেখানে ভ্রমণে যাওয়ার সুপ্ত বাসনা মনে মনে পুষেছিলাম। রাঙামাটি দুর্গম অঞ্চলে সাজেক ভ্যালির অবস্থান এবং কীভাবে কোন সময়ে সেখানে যাওয়ার উপযুক্ত দিনক্ষণ তার পূর্ণ ধারণা ছিল না। এদিক-ওদিক পরিচিত ভ্রমণপিপাসুদের কাছ থেকে খোঁজ নিতে শুরু করলাম। শেষে অপেক্ষার পালা শেষ হলো। যা হোক আমরা সাতজন এখন পূর্ণ প্রস্তুত। হোটেল, বাস টিকিট বুক করা হলো। ইতিমধ্যে তিনজন পিছটান দিল; কিন্তু আমি অবিচল, প্রয়োজনে আমি একাই যাব। এখন আমরা চারজন। যাওয়ার ঠিক আগের দিন, আরেক বন্ধু বাদ সেধে বসল অজুহাতে যে, পার্বত্য অঞ্চলে সেনা সদস্যদের ওপর শান্তিচুক্তিবিরোধী উপজাতিদের আক্রমণ হয়েছে। সে আমাদের তিনজনকে বোঝাতে লাগল সেখানে না যাওয়ার জন্য। তবে আমরা তিনজন নাছোড়বান্দা_ জাভেদ হাকিম, মোস্তাক জুবায়ের নির্দিষ্ট দিনে সাজেক ভ্যালির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম। খাগড়াছড়ি পেঁৗছে পর্যটন হোটেলে এক রাত থেকে পরের দিন সকালে চাঁদের গাড়িতে চড়ে সাজেকের উদ্দেশে রওনা হলাম। অনেক আর্মি পুলিশ চেকপোস্ট পার হয়ে যেতে হয়। বাঘাইছড়ি আর্মি চেকপোস্টে সেনা সদস্যরা আমাদের যেতে দিতে চান না। তারা বলেন, আপনারা যার রেফারেন্সেই আসুন না কেন, বাস্তব পরিস্থিতি হচ্ছে আমরা এখানে আছি। সুতরাং আপনাদের সেখানে যেতে দিতে পারি না। কারণ সাজেক ভ্যালি এতই দুর্গম এবং গভীর অরণ্য যে, আপনারা অপহৃত হলে আমাদের প্রচুর কষ্ট হবে উদ্ধার অভিযানে। অনেক সময় পাহাড় থেকে বন্যহাতির দল নেমে আসে। তাদের অনেক অনুরোধের পর আমাদের যাওয়ার অনুমতি মিলল। এমনিভাবে প্রতিটি ক্যাম্পে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। শেষমেশ চেকপোস্ট পার হয়ে আমাদের চাঁদের গাড়ি ছুটল পাহাড়ি পথে। তখন শুধু প্রকৃতির একক রূপ আমাদের নয়নে ধরা পড়তে শুরু করল। দুপাশে গভীর অরণ্য, মাঝে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ গাড়ি কখনও ওপরের দিকে উঠছে, কখনও নিচের দিকে। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছে এই বুঝি আকাশ ছুঁতে চলেছি। কোনো জনমানবের চিহ্ন নেই। আমরা কোনো ভয় পাচ্ছি না, বরং আনন্দে গাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে ছাদে চড়ে বসলাম। অবাক হয়ে শুধু সাজেক যাওয়ার পথের রূপ দেখছি। অনেকক্ষণ গাড়ি চলার পর উপজাতি যুবকদের দেখছি বড় বড় দা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের পরনে আধুনিক পোশাক, তাদের হাতে দা দেখে আমরা কিছুটা ভয়ও পেয়েছি বৈকি! চাঁদের গাড়ি সাজেকে রুইলুই পাহাড়ে ঢুকতেই ছয়-সাতজনের একদল উপজাতি কাঁধে বন্দুক নিয়ে আমাদের গাড়ি থামাল। বন্ধু মোস্তাক প্রায় প্রস্তুতি নিল লাফ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার। ওকে ঠেকালাম। তাদের কথায় বুঝলাম তারা উপজাতি প্রধান অর্থাৎ হেডম্যান। যাওয়ার সময় এক ক্যাপ্টেন তাদের মধ্যের একজনের নাম বলে দিয়েছিলেন। সেই ভদ্রলোককে তাদের মধ্যে পাওয়া গেল। তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন সাজেক ইউনিয়নের বিইউপি বিজিবি ক্যাম্পে। বিজিবি সুবেদার তো আশ্চর্য হয়ে গেলেন_ আমরা এত দুঃসাহস পেলাম কী করে এখানে আসার! ঢাকা থেকে এসেছি জেনে তারা আমাদের আপ্যায়ন করলেন। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হচ্ছে সাজেক ভ্যালি






ক্যাম্প থেকে কিছুটা ভেতরে কমলক নামে একটি এলাকা আছে, খুবই সুন্দর আমরা বিজিবি সদস্যদের কাছে আবদার করলাম সেখানে যাওয়ার জন্য তারা প্রথমে বারণ করেন, পরে জোরালো অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমতি দিলেন বিজিবি সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় আমাদের সঙ্গে গেলেন সেখানে গিয়ে প্রকৃতির এমন এক রূপ আমরা আবিষ্কার করলাম, যে রূপ আর কোথাও দেখিনি দুঃখের বিষয়, বিজিবি কর্তৃক ছবি তোলা নিষেধ, তাই ছবি তুলতে পারিনি কমলক রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় সিপ্পুতে অবস্থিত সেখানকার উপজাতিরা পাঙ্কু সম্প্রদায়, অধিকাংশই শিক্ষিত এবং পোশাকে আধুনিক কমলকের উপজাতি তনা মেম্বার আমাদের খুব আপ্যায়ন করলেন তবে বিজিবি সদস্যদের আপত্তির কারণে সেদিনই ফিরতে হয়েছিল সবশেষে বলতে হয়, ভারতের দার্জিলিং থেকে যদি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা না যেত, তাহলে বাংলাদেশের সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্যের প্রাচুর্য বোঝা যেত না সাজেক ভ্যালি রাঙামাটির অন্তর্গত হলেও ভ্রমণপিপাসুদের খাগড়াছড়ি দিয়ে যাওয়া সহজ মাধ্যম
আমার কিছু কথা, সেপ্টেমবর ২০১৩-
সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্ভূক্ত হলেও ঢাকা থেকে যাবার জন্য খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়াই সবচাইতে সহজ। খাগড়াছড়ি হতে সরাসরি চান্দের গাড়ী নিয়ে সাজেক যাওয়া যায়। চান্দের গাড়ী যখন পাহাড়ের পথ ধরে ছুটে চলে তখন শুধু প্রকৃতির একক রূপ আপনার চোখে ধরা পরবে অাপরূপ হয়ে। দুপাশে গভীর অরণ্য, মাঝে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ। গাড়ি কখনও ওপরের দিকে উঠছে, কখনও নিচের দিকে। মাঝে মধ্যে মনে হবে এই বুঝি আকাশ ছুঁতে চলেছি। কোনো জনমানবের চিহ্ন নেই। কেবলই অবাক হয়ে সাজেকের রূপ দেখা
এখানকার স্থানীয় আর্মি ক্যাম্প থেকে কিছুটা ভেতরে কমলক নামে একটি এলাকা আছে, খুবই সুন্দর। সেনাবাহিনীর অনুমতি সঙ্গ নিয়ে সেখানে যেতে পারেন। সেখানে গিয়ে প্রকৃতির এমন এক রূপ আবিষ্কার করবেন যা আর কোথাও দেখেনি। তবে দুঃখের বিষয়, বিজিবি কর্তৃক ছবি তোলা নিষেধ। কমলক রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় সিপ্পুতে অবস্থিত। সেখানকার উপজাতিরা পাঙ্কু সম্প্রদায়, অধিকাংশই শিক্ষিত এবং পোশাকে আধুনিক
যেভাবে যেতে হবে
খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে একদিনে সাজেক ভ্যালী ঘুরে আসতে পারবেন ভাড়া নিবে ৫০০০-৬০০০ টাকা এক গাড়িতে ১৫ জন বসতে পারবেন লোক কম হলে শহর থেকে সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেনভাড়া ৩০০০ টাকার মতো নিবে অথবা খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা গিয়ে সাজেক যেতে পারবেন বাসে দীঘিনালা জন প্রতি ৪৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলে জন প্রতি ভাড়া ১০০ টাকা দীঘিনালা থেকে ১০০০-১২০০ টাকায় মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন ফেরার সময় অবশ্যই সন্ধ্যার আগে আপনাকে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প পার হতে হবে তা না হলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে ক্যাম্পের ছবি তোলা নিষেধ এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাবার রুটটা এমনখাগড়াছড়ি দিঘীনালা বাঘাইহাট কাসলং মাসালং সাজেক



সর্তকতা
সাজেক খুবই দুর্গম এলাকা। সেনাবাহিনী সেখানে যেতে দিতে চাইবে না। কারন অপহরণের আশংকা রয়েছে।

যাবার আগে সেনাবাহিনীর কোন রেফারেন্স নিয়ে যেতে হবে।

খাগড়াছড়ি নেমে সাজেক যাবার জন্য সেনাবাহিনীর অনুমতি নিতে হবে।

সেখানকার উপজাতীয়দের সাথে বন্ধুসূলভ আচরণ করাই উত্ত্ম


রাতে থাকার জায়গাঃ 
সাধারণের রাতে থাকার জন্য কোন রেষ্ট হাউজ বা কটেজ গড়ে উঠেনি এখনও। একমাত্র থাকার জায়গা আর্মিদের রেস্ট হাউজ। ইসিবি ১৯ এর নির্মাণ করা দুরুমের চমৎকার একটি রেস্ট হাউজ! তবে আর্মি রেফারেন্স ছাড়া এখানে জায়গা হবেনা আপনার। আর্মি রেফারেন্স থাকলেও অন্ততঃ ১৫ দিন আগে বুকিং দিতে হবে এখাতে থাকার জন্য।

কংলাক পাড়ায় বাঁশ-কাঠের তৈরী জেলা পরিষদের একটা ডাক বাংলো আছে বটে..তবে সেটা থাকার অযোগ্য। সেক্ষেত্রে আপনি কংলাক পাড়ার কারবারীর/সর্দার/হেড-এর আতিথেয়তা গ্রহণ করতে পারেন। দায়িত্বে ছিলেন কারবারীর সহযোগী জারা পাংখু। কংলাকে রাত্রি যাপনের ইচ্ছে থাকলে জারা পাংখুর সাথে যোগাযোগ করে যেতে পারেন (যোগাযোগের নম্বর-০১৫৫৩২৮৭৪১৮)




খাগড়াছড়ি:
  • পর্যটন মোটেলঃ এটি শহরে ঢুকতেই চেঙ্গী নদী পার হলেই পরবে মোটেলের সব কক্ষই ২ বিছানার ভাড়াঃ এসি ২১০০ টাকা, নন এসি ১৩০০ টাকা মোটেলের অভ্যন্তরে মাটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র বানানো আছে যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫
  • গিরি থেবার : এটি খাগড়াছড়ি শহরের কাছে খাগড়াছড়ি ক্যন্টনমেন্টের ভিতরে অবস্থিত। এখানে সিভিল ব্যক্তিরাও থাকতে পারে। সব রুমই শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। যার মধ্যে ২ টি ভি আই পি রুম, প্রতিটির ভাড়া ৩০৫০ টাকা। ডাবল রুম ভাড়া ২০৫০ টাকা। একটি সিংগেল রুম যার ভাড়া ১২০০ টাকা। যোগাযোগ : কর্পোরেল রায়হান- ০১৮৫৯০২৫৬৯৪।
  • হোটেল ইকো ছড়ি ইনঃ খাগড়াপুর ক্যান্টর্মেন্ট এর পাশে পাহাড়ী পরিবেশে অবস্থিত এটি রিসোর্ট টাইপের হোটেল যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২৬২৫, ৩৭৪৩২২৫
  • হোটেল শৈল সুবর্নঃ ০৩৭১-৬১৪৩৬, ০১১৯০৭৭৬৮১২
  • হোটেল জেরিনঃ ০৩৭১-৬১০৭১
  • হোটেল লবিয়তঃ ০৩৭১-৬১২২০, ০১৫৫৬৫৭৫৭৪৬, ০১১৯৯২৪৪৭৩০
  • হোটেল শিল্পীঃ ০৩৭১-৬১৭৯৫

রুইলুই পাড়া:
  • আলো রিসোর্ট : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এটিতে মোট ৬ টি রুম আছে। ডাবল রুম ৪ টি ( ২টি খাট করে) যার প্রতিটির ভাড়া ১০০০ টাকা। সিংগেল রুম ২ টি প্রতিটির ভাড়া ৭০০ টাকা যোগাযোগ : পলাশ চাকমা - ০১৮৬৩৬০৬৯০৬।
  • রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউজ : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এখানে ১৫ জনের মত থাকতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হবে। নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। এর কেয়ার টেকার মইয়া লুসাই দাদা সব ব্যবস্থা করে দিবে। লক্ষন নামেও একজন আছে, প্রয়োজনে আপনাদের সহযোগীতা করবে। এখানে দুইটি টয়লেট আছে। একটি ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যটির জন্য ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে। যোগাযোগ : মইয়া লুসাই - ০১৮৩৮৪৯৭৬১২। লক্ষন - ০১৮৬০১০৩৪০২।
 দীঘিনালা:
  • দীঘিনালা গেস্টহাউজঃ এটি দীঘিনালা শহরের বাস স্ট্যান্ডের উল্টো পাশে অবস্থিত এটি দীঘিনালার আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে একটু মানসম্মত এখানে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে রুম নিয়ে থাকা যাবে ট্রাভেলার হিসেবে এই গেস্ট হাউজে প্রথম আমি ও আমার "বাংলার ট্রেকার" গ্রুপ থাকি এবং অনেককে পাঠানোর কারনে আমার রেফারেন্স দিলে কিছুটা সুবিধা পাবেন নূর মোহাম্মদ(ম্যানেজার) - ০১৮২৭৪৬৮৩৭৭, কনক চাকমা : ০১৫৫৬৭০৩৮১৩।
  • শাহজাহান হোটেলঃ হোটেলটি  দীঘিনালা বাজারেই ০১৮২৫৯৮০৮৬৭  (ম্যানেজার) ০১৭৩২৫৭৩৬১৫ (মালিক)

ভাল কথা, সাজেকে টেলিটকের নেটওয়ার্ক পাবেন। কোন কোন সেটে গ্রামীনের একদাগ নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় বটে, তবে নেটওয়ার্ক এই থাকে আবার এই নাই!
সাজেক ঘুরে দেখবার জন্য এক বেলাই যথেষ্ট! সাথে নিজেদের গাড়ী থাকলে সাজেক থেকে ফেরার পথে মারিশ্যা অথবা লংগদু মায়ানিমূখ দেখে আসতে পারেন দুটোই গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ী জনপদ! দিঘীনালা থেকে মারিশ্যা এবং লংগদু-এর রাস্তা ভাল আমরা ফেরার পথে অতিরিক্ত দুই ঘন্টা (যাওয়া-আসা) ব্যয় করে দেখে এসেছি কাপ্তাই লেকের পাড়ের জনপদ লংগদু

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি পথটুকু চিটাগাং হয়ে না গিয়ে বারৈয়ের হাট রামগড় হয়ে গেলে সময় পথ বেঁচে যাবে অনেকটা। পাহাড়ী রাস্তার দুধারের দৃশ্যও মনোরম। ফেরার পথে হাতে অতিরিক্ত দুঘন্টা সময় থাকলে ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্ত- দেখে আসতে পারবেন এই ফাঁকে






রাঙামাটির সাজেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্থানীয় লোকজনের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন ১০টি দেশের ৩২ জন পর্যবেক্ষক। গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় পর্যবেক্ষকরা চট্টগ্রাম থেকে হেলিকপ্টারযোগে সাজেকে পৌঁছেন। স্থানীয় লুসাই সম্প্রদায়ের নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে তাঁদের সম্ভাষণ জানানো হয়। পর্যবেক্ষকরা হলেন, বিভিন্ন দেশের ডিফেন্স অ্যাটাচে বা মিলিটারি অ্যাটাচের (কূটনৈতিক মিশনে অংশগ্রহণকারী প্রতিরক্ষা বা সামরিক বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা) সদস্য। বাঘাইহাট সেনা জোন সূত্রে জানা যায়, সফরকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন রাশিয়ার কর্নেল দিমিত্রী মইচিভ। ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, সৌদি আরব, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, তুরস্ক, চীন জাম্বিয়ার প্রতিনিধিরা সপরিবারে ছিলেন। ছাড়া ছিলেন দেশের সশস্ত্র প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার ১০ জন প্রতিনিধি। অতিথিদের সম্মানে সাজেক রুইলুই পাড়াতে লুসাই শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা সংগীত নৃত্য পরিবেশন করে। দুর্গম এলাকা হলেও সাজেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হন অতিথিরা। রুইলুই পাড়ার হেডম্যান লাল থাংয়া লুসাই জানান, সাজেককে ঘিরে পর্যটন এলাকা করার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার
আজ কিছু সুখবর দিবো-
দুর্গম সাজেক এখন আর দুর্গম নয়। সেখানে পরিবর্তনের যে সূচনা হয়েছে, তার একটি পর্যায় অতিক্রম করেছে সমপ্রতি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাজেক উন্নয়নের কাজও অনেকটা শেষ। পাঁচটি স্থাপনা নির্মাণ শেষে এর উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের এরিয়া কমান্ডার ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সাব্বির আহমেদ এনডিসি পিএসসি। সেই সাথে সাজেক থেকে সরাসরি শান্তি পরিবহনের বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। রাতে সাজেকের সড়ক আলোকিত করতে লাগানো হয় সোলার প্যানেলের সড়কবাতি
প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল সাব্বির আহমেদ বলেন, সাজেক হবে পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। আর তা স্থানীয়দের জন্য উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার হিসেবে উম্মোচিত হবে। সাজেকের রুইলুই পাড়া হবে একটি মডেল। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেনাবাহিনী খুব দ্রুত কাজ সম্পন্ন করেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাজেকের ত্রিপুরা ধর্মাবলম্বীদের উপাসনার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি শিব মন্দির। এছাড়া ধর্মীয় সামাজিক অনুষ্ঠান পালনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ক্লাবহাউস। সাজেকের বাসিন্দাদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল পানি। প্রায় / কিলোমিটার দূরের পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সংগ্রহ করতে হত পানি। পানির সমস্যা দূর করা হয়েছে। পাম্পমেশিনের সাহায্যে পানি তুলে সংরক্ষণের জন্য বিশালাকার হাউজ করা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের বসবাসকৃত ঘরের আদলে আরো উন্নতমানের একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে দরিদ্র হাপিং ত্রিপুরাকে। সেই ঘরের নাম দেওয়া হয় মডেল হাউস। রুইলুই পাড়ার বাসিন্দাদেরকে পর্যায়ক্রমে একটি করে মডেল হাউস করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাজেকে কোনো মাধ্যমিক বা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না। রুইলুই পাড়াতে রুইলুই জুনিয়র হাইস্কুল নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। বাস সার্ভিস চালুর পর যাত্রীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে যাত্রীছাউনিও
সাথে আরো কিছু ইনফো জেনে নি যা সাজেকে গেলে কাজে লাগবে-
  • মাচালাং বাজারে প্রতি শুক্রবার হাট বসে, চাইলে এখানে ঘুরাঘুরি করতে পারেন। বাজারে সব ক্রেতা বিক্রেতা সবাই পাহাড়ী, / জন বাঙালি।
  • রুইলুই পাড়াতে দেখার মত অনেক কিছুই আছে, চারপাশে অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি আছে অনেকে ফটো তুলে নিতে পারেন।
  • সাজেকের স্থানীয় হেডম্যান এর নাম লালথাংগা লুসাই, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নাম চংমিং থাংগা লুসাই।
  • সাজেকের উচ্চতম পাড়ার নাম কনলাক পাড়া, আসার পথে কমলা বাগান আছে।
  • এখানে কফির চাষও হয়


সাজেক ছাড়া আরো কিছু জানার থাকলে আমার ফেইসবুক পেইজে যোগাযোগ করতে পারেন- Rono’s Traveling