Sunday, May 24, 2015

স্বপ্নের সাজেকে দ্বিতীয়বার



সাজেক নিয়ে আমি গত ২/৩ বছর অনেক পড়েছি, অনেক জেনেছি, অনেক ভেবেছি, অনেক স্বপ্ন দেখেছি, অনেক যেতে চেয়েছি, অনেকবার ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও যাওয়া হয়নি, আবার কয়েকবার যাবার প্ল্যান করার পর গ্রুপ মেম্বারের অভাবে সেটা স্বপ্নেই থেকে গিয়েছিল।

একটা সময় খুব একা ফিল করতাম, হতাশ ছিলাম, আর সাজেকের গল্প পড়তাম ব্লগে, পেপারে, বইয়ে। সেখানকার জীবনযাত্রা জেনে গিয়েছিলাম আরো দুই বছর আগেই। লুসাই পাংখোয়া জাতির কথা মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। চাকরি ছেড়ে একটা সময় সাজেকে পালিয়ে হতাশা থেকে বাচঁতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাজেক আমার দেখা হয়নি সে সময়।

কথাগুলো আমার প্রথমবার সাজেক ভ্রমনের পরে ব্লগে লিখা। আজ আবার ব্লগখানা বের করে দেখি এবার এটা নিয়ে আরেকটু বাড়িয়ে লিখা দরকার। আসলে ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও এখন কোথাও যাওয়া হয় না, গেলেও অনেক বাধা আসায় ট্রাভেলের ইচ্ছেটা দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু যার মাথায় ট্রাভেলের পোকা থাকে সেটা মনে হয় আর বের হয় না হবেও না, মাথার এক কোনার নিউরনে থেকেই যাবে।

সাজেক নিয়ে এবার লিখার আগে আপনাদের কিছু প্রশ্ন করবো দেখি পারেন কিনা?

সাজেক কোথায় অবস্থিত?
  •     বান্দরবন থানছিতে
  •     রাঙ্গামাটির রুইলুইতে
  •     খাগড়াছড়ির দিঘিনালায়
  •     ইন্ডিয়ার মিজোরামে
Click: Riffat Shahriar


বাংলাদেশের কোন যায়গায় গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা একসাথে/একইদিনে পাওয়া যায়?
  •      নোয়াখালী
  •      ফেনী
  •      সাজেক
  •      শ্রীমঙ্গল
  •      ঢাকা
Click: Riffat Shahriar


সাজেকে কারা বসবাস করে?
  •      চাকমা
  •      ত্রিপুরা
  •      পাংখুয়া
  •      লুসাই
  •      আপনি আর আমি
  •      আর্মি/পুলিশ/বিজিবি
Click: Riffat Shahriar


সাজেক দেখে আপনার কোন দেশের মত মনে হবে?
  •      নেদারল্যান্ড
  •      ভারত
  •      নেপাল
  •      ভূটান
  •      কোলকাতা
Click: Riffat Shahriar


সাজেকে কোথায় থাকবেন?
  • রক-সাজেক রিসোর্ট/ রুন্ময় রিসোর্ট/ আলো রিসোর্ট
  • পাহাড়িদের বাড়িতে
  • হোটেল সাজেক ওয়েস্টিন
  • সাজেক রিজেন্সি হোটেল
  • মোটেল রেডিসন-সাজেক
Click: Riffat Shahriar


সাজেকে কি শস্য পাওয়া যায়?
  •     গ্লোরিয়া জিন্স/কফি ওয়ার্ল্ড-এর কফি
  •     সিলেটের ৭ লেয়ারের চা/চা পাতা
  •     আলু
  •     হলুদ
  •     তরমুজ
Click: Riffat Shahriar


কি? কয়টা পারবেন? আশা করি উত্তরগুলো জানাতে হলে আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হবে অথবা আগের ব্লগগুলো আপনাকে পড়তে হবে।

দ্বিতীয়বারের মত সাজেক দেখে সাজেকের ষোলকলা পূর্ন হবার কথা বলি।

খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে মারিশ্যা রাস্তার উপর দিয়ে কাচালাং পার হয়ে মাচালাং হয়ে রুইলুই পাড়ায় রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন সাজেক ভ্যালীতে আসতে হবে। সাজেকের জন্যে এবার ১২ জনের গ্রুপ নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে খাগড়াছড়ি পোছাইলাম ৯.৩০-এ, নাস্তা সেরে একটা বাটপার ড্রাইভারকে নিয়ে রওনা দিলাম, ৭,০০০ টাকা যাওয়া আসা চুক্তিতে।

বলে রাখা ভালো, আগের মত এখন আর ড্রাইভাররা ভালো না, দালাল হয়ে গেছে, বাঙ্গালী দেখলেই বোকা বানাইতে চায়, ১০-১৫ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া চেয়ে বসবে, চিন্তাও করতে পারবেন না। আর সাজেকে ড্রাইভারের খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব আপনি নিবেন না। সেটা শুরুতেই ভেঙ্গে নিবেন।

আর কংলাক/কমলক (সাজেকের উচ্চতম পাড়ার নাম কংলাক পাড়া (কমলক), আসার পথে অনেক কমলা বাগান আছে। কমলক রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় সিপ্পুতে অবস্থিত। সেখানকার উপজাতিরা পাঙ্কু সম্প্রদায়, অধিকাংশই শিক্ষিত এবং পোশাকে সেই রকম আধুনিক। কাংলাক থেকে আর সামনে না যাওয়াই ভালো কারন  অপহরণের আশংকা রয়েছে। এখানে কফির চাষও হয়।) যাবেন সেটা আগেই ভেঙ্গে নিবেন।

অবশেষে পৌঁছে যাই স্বপ্নের সাজেক। সাজেকের পাহাড় চূঁড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের অদ্ভুত দৃশ্য দেখে সকল ক্লান্তি ও কষ্ট নিমিষেই স্লান হয়ে যায়। প্রকৃতির এতো সুন্দর রূপ আগে কখনও দেখিনি। সাজেকের এই প্রাকৃতিক রূপের সাথে পাংখোয়া ও লুসাই আদিবাসীদের বৈচিত্রময় জীবন যাত্রা দেখে আরও বিস্মিত ও হতবাক হয়ে যাই। উঁচু মাচার ঘরে গাছের গুড়ি কেঁটে বানানো সিঁড়ি, ঘরের ছাউনী বাঁশের পাতার। ঘরের সামনে ফুলের বাগান, মাঝে মাঝেই ক্যাকটাস ও অর্কিড শোভা পাচ্ছে রুইলুই গ্রামটি। ঢালুতে ২/৩ শত বছরের পুরোনো বিশাল বিশাল গাছ। বাড়ির অদূরেই অসংখ্য কমলা বানান। এরই মাঝে চোঁখে পড়ে অসংখ্য ঔষুধী গাছ-গাছড়া। একে বারে ঢালুতে যেদিন তাকাই সেদিকই লক্ষ কোটি বাঁশ আর বাঁশ। সেই ঘর থেকে একে একে বেড়িয়ে আসছে আদিবাসীরা। কেউ পানি আনতে, কেউ বা জুম ক্ষেতে উৎপাদিত ফসল আনতে ব্যস্ত তারা। পরনে তাদের জিন্সের প্যান্ট, গায়ে হাতা কাঁটা সট গেঞ্জি, ব্রা, শার্ট, স্টাট ইত্যাদি। লাবন্যময়ী রূপসী মেয়েদের দেখে মনে হয়েছে বোম্বের কোন নায়িকা এখানে শুটিং-এ এসেছে। পোষাক দেখে মনে হয়েছে এ যেন বাংলাদেশের ভেতর এক খন্ড ইউরোপ।

বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘোরাঘুরি এক পর্যায়ে জানাগেল তাদের ধর্ম খৃষ্টান। মিজো ভাষায় তারা কথা বললেও ইংরেজি তাদের অক্ষর ইংরেজী। লুসাই ও পাংখোয়া আদিবাসীরা বাংলা ভাষার চেয়ে ইংরেজিতে কথা বলতেই বেশি পছন্দ করে। এসকল ভিন্ন জীবন ধারার সাথে পার্বত্য এলাকার অনেক উপজাতিই পরিচিত নয়।
এসব আমি আগেও বলেছি এবার আবারো বললাম।

সাজেকে সিকিউরিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হাস্যকর, যেখানে ১টা আর্মি ক্যাম্প, ১টা বিজিবি ক্যাম্প, ১টা পুলিশের ক্যাম্প অবস্থিত যাকে সাজেক বিওপি বলে। আমার ছবিতে একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে ১জন বিজিবি সদস্য হেটে যাচ্ছে। আর পুরা এলাকাই আর্মির সিকিউরিটির আন্ডারে। আর সাজেকে আসার আগে ২টা আর্মির ক্যাম্পে রিপোর্ট করে আসা লাগে। রুইলুই পাড়ায় কে ঢুকে কে বের হয় সব রেজিস্টারে লিখা হয়। আমি যেখানে ছিলাম সেই রুমের দরজার কোন তালাও ছিল না, পাহাড়ি কেউ এই এলাকায় চুরি চামারীও করে না। সবাই আর্মিকে যমের মত ভয় পায়, গেম অফ থ্রোন্সের একটা ভাব আছে।



Click: Riffat Shahriar


আর ঢাকায় যেখানে ৩৬/৩৭ ডিগ্রি গরম পড়েছে সেখানে সাজেকে রাতে আমরা ঠান্ডার কারনে কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছি। আর বিকালে যে ঝড় তুফান হল আর এর পর যে পাহাড়ি ঢল, অনেকদিন এমন ঝড়ে পড়িনাই/দেখিনাই। শেষে এক আর্মির গাড়িতে করে আমাদের রুন্ময়ের সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়। এক একটা বৃষ্টির ফোটা গায়ে পড়ছিল আর মনে হচ্ছিল কে জানি আমার গায়ে আলপিন দিয়ে গুতা দিচ্ছে।

৩০ মিনিটের বৃষ্টির পর যে মেঘ দেখলাম চোখের সামনে দিয়ে ভেসে যাচ্ছে , মনে হচ্ছিলো যাহ এসব কি দেখি? সত্য কি আমি দেখলাম? সাথে থাকা বন্ধুকে বললাম বেটা টর্চ মার তো দেখি কি যায় সাদা সাদা। চোখের সামনে ১ কিলোমিটার দূরে সাজেক রিসোর্ট দেখলাম মেঘে ঢেকে গেলো। রিসোর্টের ভিতরের আলো আবছা দেখা যায়। হেলিপ্যাডে যেতে যেতে মেঘ নামক হাল্কা স্তরের কুয়াশা আর দেখা গেল না। পরদিন আবার যে রোদ পড়লো আমার ২ পায়ের নিচের দিক আর ২ হাত রোদে একদম পুড়ে গেল, সেই পোড়া হাতের জ্বালা নিয়েই লিখছি এখন।
যাক শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়বারের মত সাজেক দেখে সাজেকের ষোলকলা পূর্ন হল এবার। সব দেখেছি একদম সব। 

ঢাকায় চলে এসেছি নিয়ে এসেছি সাজেকের অনেক ছবি।

ছবি এবার দিবো পরে, এবার আর বেশি ছবি দেখাবো না, নিজের চোখে দেখে আসুন, আশা করি ভালো লাগবে। প্রথমবার সাজেক ঘুরে আসার পর আগের ব্লগে কথা দিয়েছিলাম আবার যাবো সাজেক, হুম আমি কথা রেখেছি।  
আজ আবার কথা দিচ্ছি আবার যাবো। তবে আশা করি পরের বার নিজের ফ্যামিলি নিয়ে যাবো।


Click: Riffat Shahriar


সাজেক নিয়ে আমার আগের ব্লগ দেখতে পারেন-

-স্বপ্নের সাজেকে একদিন

এছাড়াও খাগড়াছড়ি নিয়ে ব্লগ দেখে নিতে পারেন-
-খাগড়াছড়ি ভ্রমণ
-আলুটিলাগুহা, খাগড়াছড়ি

সাজেক এখন আর স্বপ্ন নয়!  

সাজেক নিয়ে  Hello Tech এর উদ্যোগে একটি এন্ড্রয়েড এপ্স বানানো হয়েছে, চাইলে ডাউনলোড করতে পারেন নিচের লিঙ্ক থেকে। 


এপ্স ডাউনলোড লিঙ্কঃ Sajek Tour Guide (সাজেক গাইড)



সাজেক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে এপ্লিকেশনটিতে।
  • কিভাবে যেতে হয়
  • কোন যাতায়াতের ভাড়া কেমন
  • সর্বমোট বাজেট কেমন লাগতে পারে
  • কোথায় থাকার ব্যবস্থা আছে
  • পাহাড়ি মাচায় থাকতে হলে কি করতে হবে
  • ট্যুর গাইডের জন্য
  • রিসোর্ট বুকিং এর জন্য কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে –এই তথ্য গুলো আছে এপ্লিকেশনটিতে।

No comments:

Post a Comment