Thursday, April 30, 2015

বাংলাদেশের শীর্ষ সাত পাহাড় (উচ্চতা অনুসারে)

সাকাহাফং : 

বই পত্র আর ম্যাপে এর নাম মদক তং ট্রেকাররা ডাকে সাকাহাফং নামে বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব সীমানায় মায়ানমার সাথে দেয়ালের মত দাড়িয়ে আছে মদক রেঞ্জ বা পাহাড়ের সারি এই পাহাড় সারির মাঝেই আছে দেশের সবচেয় উচু উচু চুড়াগুলো সাকাহাফং নামটা ত্রিপুরা ভাষায় যার অর্থ পূবের পাহাড় প্রথম দিকের অভিযাত্রীরা সব ত্রিপুরা পাড়া শালুকিয়া অবস্হান করে চুড়ায় যেতো প্রথামদিককার একটি অভিযাত্রী দল এসে এই পাহাড়ের নাম খোজ করলে জানতে পারে পাহাড়ীদের কাছে (ত্রিপুরা) এর কোন নাম নেই ! পাহাড়টা পূবদিকে তাই অভিযাত্রীরা গ্রামবাসীদেরর সাথে আলোচনা করে ঠিক করে এখন থেকে একে পুবের পাহাড় নামেই ডাকা হবে সেই থেকে এর নাম ত্রিপুরা ভাষায় সাকাহাফং নামেই প্রচার প্রসার লাভ করে  


ত্লং

অনেকদিন পর্যন্ত মদক মুয়ালকেই কিছু কিছু লোকজন দেশের সবচেয়ে উচু চুড়া মনে করত তবে নাসার স্যাটেলাইট ডেটা থেকে দেখা যায় এটা দেশের ২য় বা ৩য় চুড়া কোন কোন স্যাটেলাইট ডেটা অনুসারে রেংত্লাং রেঞ্জের দুমলং ২য় আর -ত্লং তৃতীয় তবে অভিযাত্রী দলগুলো প্রায় সবাই ত্লং কেই ২য় পেয়েছে তবে জত্লং এর প্রধান বৈশিষ্ট্য এর ১ম, ২য় বা ৩য় অবস্হান না এর কঠিন আর দুরূহ আরোহন পথটাই একে অন্যান্য চুড়া থেকে সতন্ত্র করেছে সব অভিযাত্রীরাই কথা বিনা দিধায় বলবে আমাদের দেশে -ত্লং আরোহন - সবচেয়ে কঠিন


দুম লং : 

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া মদক তং বা সাকাহাফং অভিযানের পর দেশের এডভেঞ্চার প্রেমীদের চোখ পরে দুমলং এর উপর রেংত্লাং রেঞ্জের সর্বোচ্চ চুড়াটি তখনও দুমলং নামে পরিচিত হয়নি গুগুল আর্থ - এটাকেই দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চুড়া হিসেবে দেখাত রেংত্লাং এর সর্বোচ্চ চুড়া হিসেবে একে রেংত্লাং নামেই ডাকা হতো  রেংত্লাং এর এই চুড়াটা স্হানীয়রা দুমলং নামেই ডাকে দুমলং মুলত একটি ঝিরি বা ছোট পাহাড়ি নদী , যেটা পাহাড়ের গা বেয়ে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে রাইখান নদীটে মিশেছে এই ধারাটির উৎস হিসেবে চুড়াটাকেও দুমলং বলা হয়  দুমলং এর তিনটি চুড়া , উত্তরের চুড়া, পশ্চিমের চুড়া আর আসল চুড়া 



যোগী হাফং :

বাংলাদেশের  পর্যন্ত অভিযান হয়েছে এমন পাহাড়গুলোর মাঝে সবচেয়ে বিপজ্জনক  ঝুকিপূর্ণ চুড়া যোগী হাফং মায়ানমারসীমান্তে অবস্হিত মদক রেঞ্জেরআরো উচু উচু চুড়া আছে  দেশের সবচেয়ে উচু চুড়া মদক তং বা সাকাহাফং  এই এলাকাতেই অবস্হিত  আর সবচেয়ে কঠিন  কষ্ট সাধ্য  ত্লং (২য়সর্বোচ্চএর খুব কাছেই অবস্হিত  কিন্তু এই যোগী হা ফং বা যোগী পাহাড়টাই আরোহণের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক  


কেওক্রাডং :

কেওক্রাডং বা তাজিংডং কোনটাই যে দেশের শীর্ষ চুড়া না , সেটা ইউএস টপোগ্রাফিক ম্যাপ আর রাশান টপো ম্যাপে দেখা যায় বেশ কয়েক বছর আগেই তবে এই ম্যাপগুলো উন্মুক্ত হলেও সহজলভ্য ছিল না তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবের যুগে ইন্টারনেটের অভাবিত বিস্তারে সবাই বেশী করে একসেস পায় - এজাতীয় তথ্য আর মানচিত্রে 
কেওক্রাডং বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত অর্থাৎ বান্দরবানেরও দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত কেওক্রাডং শব্দটি মারমা ভাষা থেকে এসেছে মারমা ভাষায় কেও মানে 'পাথর', ক্রা মানে 'পাহাড়' আর এবং ডং মানে 'সবচেয়ে উঁচু' অর্থাৎ কেওক্রাডং মানে সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়


লুকুডং বা থিনদলতে: 

থিনদলতে পাড়া থেকে চুড়ায় যাবার সময় এরকম একটা ভিউ পাওয়া যায় থিনদলতে পাহাড় বা লুকু ডং এর থিনদলতে - একটা গাছের নাম ছোট ছোট পাতা প্রথম যখন পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় এখানে, বর্তমান কারবারীর বাবার আমলে, ছোট ছোটা পাতার এই গাছটি প্রচুর পরিমানে ছিল এখানে আর থিনদলতে গাছের নাম অনুসারে এই পাড়ার নামও হয়ে যায় থিন্দলতে পাড়া  আশে পাশের পাড়ার লোকেরা একে ডাকে 'লুকু' নামে, লুকুডং তবে থিনদলতে পাড়ার লোকেরা একে থিনদলতে ত্ল্যাং নামেও ডাকে আবার লুকুডং বলে  আর থিনদলতে পাড়া থেকে চুড়া মাত্র ঘন্টা খানেকের পথ  



রেং ত্লাং : ডুমলং এর দক্ষিণে নামটা নিশ্চত নয় অন্য নামও থাকতে পারে


Thanks রাতুলবিডি৪


Thursday, April 23, 2015

বাংলাদেশের সবচেয়ে বিপদজনক চুড়া 'যোগী' সামিট প্রমাণের ১০টি উপায়


বাংলাদেশের পর্যন্ত অভিযান হয়েছে এমন পাহাড়গুলোর মাঝে সবচেয়ে বিপজ্জনক ঝুকিপূর্ণ চুড়া যোগী হাফং মায়ানমার সীমান্তে অবস্হিত মদক রেঞ্জের আরো উচু উচু চুড়া আছে দেশের সবচেয়ে উচু চুড়া মদক তং বা সাকাহাফং এই এলাকাতেই অবস্হিত আর সবচেয়ে কঠিন কষ্ট সাধ্য - ত্লং ( ২য় সর্বোচ্চ) এর খুব কাছেই অবস্হিত কিন্তু এই যোগী হা ফং বা যোগী পাহাড়টাই আরোহণের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক ( উপরে ছবিতে যোগী/ কনদুক দেখা যাচ্ছে লোহ ঝিরি থেকে

যোগী পাহাড়ে ২০১৪-১৫ তে বেশ কিছু অভিযান হয়েছে চুড়া হিসেবে এর বিশেষ সুনাম থাকায় ট্রেকারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই যোগী বাংলাদেশের তরুণ সম্ভবনাময়ী পর্বতারোহী সালেহীন আরশাদী বিষয়টি প্রায় ছয়টির মত চুড়া লোকেট করেছেন অসুবিধা হচ্ছে যোগীতে অনেকগুলো সাব সামিট রয়েছে , যেগুলোতে গিয়ে অনেকেই বুঝতে পারেন না মুল সামিটে গিয়েছেন কিনা আর গাইড বাবাজীরাও অনেককে গূগল - ভূগল বুঝিয়ে সামিটে না পৌছিয়েই সামিট দাবী করে বসে 



মেইন সামিট থেকে কংদুক বা যোগীর ২য় ৩য় সামিট দেখা যাবে, অপেক্ষাকৃত নীচু স্পষ্ট


মেইন সামিট থেকে পাওয়া ভিউ 


মেইন সামিট থেকে চিন্হিত সাব সামিটগুলো দেখা যায়  

মেইন সামিটের / হাত দূরে / হাত নীচু একটা জায়গা দেখা যাব কাছাকাছি এরকম একটা জায়গা যোগীর অন্য সামিটগুলোতে নেই  মহান অভিযাত্রী মুগ্ধ এখানেই দাড়িয়েছিল আর মাইনুল তার ছবি উঠিয়েছিল 


বাংলাট্রেক থেকে পাওয়া মুগ্ধর ছবি 


  ত্লং আয়ান ক্লা্যাং এর ওয়েষ্ট ফেস অর্ধেকটাই যোগী ম্যাসিফ দিয়ে ঢাকা পরবে   ত্লং এর পশ্চিমের পুরা ঢাল দেখা যাবে না  ২৮০০-২৯০০ ফুটে পুরা ঢালটা সামনে থাকে  ৩১০০ ফুট সামিটে প্রায় পুরাটাই দেখা যায়কিছুটা ঢাকা থাকেমেইন সামিটে এমন নয় 


ছবিটি ২৯০০ -৩০০০ ফুট উচু থেকে তোলা  আয়্যান এবং  ত্লং এর পশ্চিম পাশ পুরাটাই দেখা যাচ্ছে এখানে 

উপরেরে ছবিতে দেখা যাচ্ছে -ত্লং এবংআয়্যান ক্ল্যাং অনেকটাই ঢাকা পরে গেছে যোগী ম্যাসিফের আড়ালে 

৩০০ ডিগ্রী একটা খোলা ভিউ পাওয়া যাবে প্রথম অভিযাত্রী দল ৩৬০ ডিগ্রী ভিউ পাওয়ার কথা জানায় , এখন একটা সাইডে প্রায় ৬০ ডিগ্রীর মত ঢেকে গেছে বাশ আর গাছে এখান থেকে -ত্লং এর ছবি তুললে কোন বাশ/গাছ ফ্রেমে আসবে না ৩১০০ ফুটের ২য় /৩য় সামিট থেকে ছবি তুললে বাশ/গাছ ফ্রেমে এসে পরবে  



মেইন সামিটের আগে একটা সাব সামিট থেকে পাওয়া ভিউ বেশ কিছু বাশ দেখা যাচ্ছে  

মেই সামিট থেকে পাওয়া ভিউ ছবির ফ্রেমে জ্ত্লং একদম খোলামেলা কোন ডাল পালা বাশ ঝাড় এসব আসেনি ছবির ফ্রেমে  

সামিট মাত্র দুই হাত একটা জায়গা ( লম্বা চওড়ায় ) পাশাপাশি দুই জন দাড়ালে গায়ে গায়ে লাগা লাগি হয়ে যাবে ! অন্য সামিট গুলো এরকম না

যোগী ম্যাসিফের ইষ্ট ফেস বেশ খানিকটা দেখা যাবে ! আর কোন সাব-সামিটে এটা সম্ভব নয়  



আয়ান ক্ল্যাং এর ইষ্ট ফেসের ঢালটা দেখা যাবে ২৮০০ -৩০০০ ফুট পর্যন্ত আয়ানের শুধু নর্থ রিজটা দেখা যায় ৩১০০ ফুটে গিয়ে নর্থ রিজ আর ইস্ট ফেস লাগালাগি ভাবে দেখা যায় কিন্তু ৩২০০ ফুটের বেশী মেইন সামিটে গেলে নর্থের রিজ লাইনটা একদম বরাবর এসে যায়  


আয়ান ক্লাং কনদুক এর কানেকটিং রিজটার ইষ্ট ফেস দেখা যাবে  


যোগী আরোহণের সময় ২৮০০-২৯০০ ফুট উচ্চতায় জ-ত্লং আর আয়্যান ক্ল্যাং দেখা যায় এরকম । দূরে ডানে চিম্বুক রেঞ্জের ক্রিসতং । সকাল বেলা পুরা সাংগু - রেমাক্রি অববাহিকা মেঘে ঢাকা ! মেঘের মাঝে উচু পাহাড়ের চুড়াগুলো মাথা বের করে আছে দ্বীপের মত। 



আয়্যান ক্ল্যাং বা হলুদ পাহাড় আর বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ জ-ত্লং আপনার ডান পাশে দেখা যাবে । আয়্যানের দক্ষিণ রিজ আর জ এর উত্তর রিজ যেখানে মিলে সেখান থেকে আয়্যানেরে উত্থান দেখা যাবে পিরামিডের মত । একই স্হান হতে 'জ-ত্লং' এর উত্থান দ্বিগুনেরও বেশী । আয়ানের পিরামিডের উচ্চতা ৪০% এর মত হবে জ -ত্লং এর তুলনায় ( একই স্হান থেকে জ-ত্লং এর পিরামিড মাপা হলে) 

যোগী আরোহণের সময় ২৯০০-৩০০০ ফুট উচ্চতায় জ-ত্লং আর আয়্যান ক্ল্যাং দেখা যায় এরকম । বেশ অনেকটা জুম করে তোলা হয়েছে ছবিটা , পোষ্টের প্রথম ছবিটা জুম করা হয়নি ) লক্ষ করবেন এই ভিউতে 'আয়ান ক্ল্যাং'এর পিরামিডের উচ্চতা ২৫-৩০% এর মত হবে 'জ -ত্লং' এর তুলনায় । ( একই স্হান থেকে জ-ত্লং এর পিরামিড মাপা হলে) 

এবার দেখুন যোগীর ২য় বা তৃতীয় সামিট থেকে কেমন দেখা যাবে : 


মুল সামিটের দক্ষিণে৩১২০ - ৩১৬০ ফুটের মত উচ্চতা বিশিষ্ট দুটি সামিট আছে উচ্চতার হিসেবে এরা যোগী ম্যাসিফের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় । এখান থেকে আয়ান ক্ল্যাং এর পিরামিড কে আরো ছোট দেখায় জ-ত্লং এর তুলনায় । উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে 'জ-ত্লং' এর ভিউ আশে পাশের সবকিছুকে ডমিনেট করছে, আর আয়ান ছোট হয়ে যাচ্ছে ! 



এবার দেখুন মূল সামিট থেকে কেমন ভিউ পাওয়া যাবে : 


সামিট থেকে দেখলে আয়ান -কে মনে হবে একদম মিশে গেছে । অল্প যতটুকু চোখে পরবে সেটা জ-ত্লং এর তুলনায় ১০% হতে পারে। মূল কথা দক্ষিন-পশ্চিম দিক থেকে আরোহণের সময় যত উচুতে উঠবেন আয়ান ছোট হতে থাকবে আর সে তুলনায় জ-ত্লং বড় হতে থাকবে। আসলে নিয়মটা এরকম-ই , যত উপরে উঠবেন বড় বড় পাহাড়গুলো আরো বিস্তৃত ও প্রশস্হ দেখায় । আর ছোট ছোটা পাহাড় ও অন্যান্য অবজেক্টগুলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে , কমপক্ষে ছোট থেকে ছোট হয়ে যায় !


THANKS TO রাতুলবিডি৪