১) ঢাকা থেকে
বিরিশিরি যাওয়ার জন্য সবচাইতে ভালো হবে বাস। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে
বিরিশিরির উদ্দেশ্যে ‘সরকার, জিন্নাত’ সহ আরো কিছু বাস ছেড়ে যায় – ভাড়া পরবে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও “এনা” পরিবহন এর বাস ময়মংসিংহ-এর মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যায় (১৮০ টাকা
ভাড়া), সেখান থেকে অটোরিকশা বা রিকশা নিয়ে বাংলাদেশ-চীন
মৈত্রী সেতু (শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ নামে পরিচিত) মোড়ে চলে যাবেন, ব্রিজ পার হয়ে বিরিশিরির গাড়িতে উঠে পড়লে পরের
তিন ঘন্টা বসে বসে দোল খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।যারা ট্রেনে যেতে চান তারা
ময়মনসিংহ পর্যন্ত যেতে পারেন এরপর বাস।
২) ঢাকা থেকে
ময়মনসিংহ পর্যন্ত বাস সার্ভিস খুবই ভালো, আড়াই তিন ঘন্টায় যাওয়া যায়, কপাল দুর্বল হলে জ্যামের কারণে সেটা ৫/৬ ঘন্টায় ঠেকতে পারে। সেখান থেকে
অটোরিকশা বা রিকশা নিয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু (শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ নামে পরিচিত)
মোড়ে চলে যাবেন। প্রতিনিয়তই বিরিশিরির বাস পাওয়া যায় ওখানে, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা।বাস সার্ভিস
থেকে সব-ই পাওয়া যাবে – রোলার কোস্টার, দোলনা ফিলিংস, সুপারম্যান ফিলিংস, হরর মুভির ফিলিংস, হটাত নিজেকে শুন্যে আবিস্কার করার নিরীহ অনুভুতি, ঘুম ছাড়াও পাশের যাত্রীর কাঁধে মাথা রাখতে পারবেন
অনায়াসেই, কপাল খুব বেশি খারাপ হলে পাশের যাত্রী বাস
দুলুনির চোটে জাত্রার বেশীরভাগ সময়ি আপনার কোলে উঠে বসে থাকবে...
৩) ময়মনসিংহ
থেকে বিরিশিরির রাস্তা’র অবস্থা অসন্তোষজনক। খুবই কম টাকায় কেউ যদি ৫
ঘন্টা রোলার কোস্টারে চড়ার অনুভুতি চান তাহলে বাসের সিটের সাথে নিজেকে গামছা দিয়ে
শক্ত করে বেঁধে নিশ্চিন্তে উঠে যান। ঝাঁকুনি সহ্য করা সম্ভব কিছুক্ষণ ড্রাইভাররে আনমনেই গালাগালি করার পর
আপনাআপনিই রাস্তাটা ভালো লেগে যাবে, এই দুলুনি থেকে যাবে বিরিশিরিতে নামার পরেও
৪) শম্ভুগঞ্জ
ব্রিজ হেঁটেই পার হওয়া যায়, রিক্সা’র দরকার নেই, ব্রিজ পার হয়ে হাতের ডান পাশেই পড়বে বিরিশিরিতে
যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা রোলার কোস্টার বাসের সারি – সময় লাগবে সাড়ে চার থেকে ৫ ঘন্টা।
৫) বিরিশিরির
বাস যাবে YMCA পর্যন্ত সেখান থেকে রিক্সা বা মোটরসাইকেল নিয়ে
সুনীল সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে সুসং দুর্গাপুর, গারো পাহাড়, গোলাপী পাহাড়, সবুজ পানির লেক ও বিরিশিরি লেক ঘুরে আসা যায়। সেখানে ভারত বাংলাদেশ বর্ডার
ছাড়াও দেখার মতন রয়েছে একটা চার্চ ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ট্রেনিং নেয়ার জন্য
তৈরী কয়েকটা পিলার (আমি পিলারগুলো দেখেছি, বাট এটার ইতিহাস লোকমুখে শুনা)। সারাদিনের জন্য রিক্সা ভাড়া পড়বে ৪০০ থেকে
৮০০ টাকার মধ্যে (যার থেকে যা রাখতে পারে)। রিক্সা আপনাকে খুঁজতে হবেনা, রিক্সাই আপনার হোটেলে এসে বসে থাকবে।
৬) বিরিশিরিতে
থাকার ব্যবস্থা খুবই ভালো – সর্বজন পরিচিত YMCA এবং YWCA নামক দুটি রেস্ট হাউজ আছে, যেখানে আরাম করে থাকা যাবে। YWCA এর জন্য ‘অমিতা সাংমা – ০১৭১২০৪২৯১৬’ এবং YMCA এর জন্য সলিল চাম্বু গং – 01731039769 / 01916622684 –
কে ফোন দিতে
পারেন। YWCA
te সাধারণ রুম পড়বে
৬০০ টাকা (২ বেড) আর VIP রুম এর হিসাব জানিনা (থাকিনাই), এচাড়াও অদের বিরাট একটা হলরুম আছে যেখানে একসাথে
১৮ জন থাকতে পারবে, সেক্ষেত্রে পার বেডে খরচ পড়বে ২০০ টাকা করে। YWCA এর ছাদটা সবচাইতে সুন্দর, সেখান থেকে পূর্ণিমা দেখতে অসাধারণ লাগে।
৭) খাওার
ব্যাবস্থা YWCA তেই করে নেয়া যায়, ওদেরকে আগে থেকে বলে রাখলে অরা মাছ-মুরগি-ডিম থেকে শুরু করে কয়েক প্রকার
ভর্তা সহ পরটা-ডাল ও রেঁধে দিবে। ওদের রান্না যথেস্ট ভালো, থাকার জায়গাটাও চমৎকার এবং পুরোপুরি নিরাপদ।
এছাড়া বাহিরে খেতে চাইলে বাসস্ট্যান্ডে কিছু হোটেল আছে, লুচি-পরটা আর ঝাল বেশী দিয়ে মাছ রান্না করে। ওদের
খাবারও মজার।
৮) ক্যাম্পিং এর
চিন্তা ভাবনা না করলেই ভালো, কারণ বিরিশিরি লেক বলে জেই নীল পানির হ্রদটা আছে সেটার আশে পাশে ‘বাতাস’ ছাড়া আর তেমন কিছুই নাই। কাজেই সেখানে খোলা আকাশের নিছে ঘুমানোটা খুব একটা
নিরাপদ মনে হয়নি আমার কাছে, তবে চাইলে থাকা যাবে। পাহাডের এপারেই কিছু বাড়ি
ঘর আছে, তবে জায়গাটা অনেক বেশী নির্জন...
৯) টিপস এন্ড
ট্রিকস : পানি কম থাকলে সোমেশ্বরী নদীটা হেঁটে পার হইয়েন, নদীর শেষ মাথায় একটা বাঁশের সেতু আছে – ফিলিংসটাই দুর্দান্ত
আর একটা কথা, লেকে বেশীক্ষণ পা ডুবিয়ে রাখবেন না, যেহেতু এটা চুনাপাথরের লেক এবং আমার জানামতে এই
লেকে কোনো প্রাণী বা মাছ নেই সেহেতু সেটার পানি হয়তবা মানুসের জন্যও ক্ষতিকারক হতে
পারে। দেখেন – ঘুরে – ছবি তোলেন - মজা লুটেন, খালি চিপসের প্যাকেট পানিতে ফালাইয়েন না – তাইলে আপনার পরবর্তী জেনারেশন খালি হায় হায় করবো, কিছুই দেখতে পারবো না...
বিশেষ
দ্রষ্টব্যঃ বিরিশিরি একটি ইউনিয়ন - দূর্গাপুর থানার একটি ইউনিয়ন - চিনামাটির পাহাড়
- রানিগঞ্জ মনেস্ট্রি - বর্ডার - নদী - যা দেখবেন সবই দূর্গাপুর থানার অন্তরগত এবং
অন্যান্য ইউনিয়ন - বিরিশিরিতে YMCA এবং YWCA নামক দুটি রেস্ট হাউজ আছে, এতটূকুই এবং আপনি বিরিশিরি ইউনিয়নের কোন কিছুতেই
ঘুরবেন না - ফসলি মাঠ ছাড়া বিরিশিরিতে আর কিছুই নেই - বেড়াতে যান দূর্গাপুর কিন্ত
নাম হয় বিরিশিরির'র - বিরিশিরিতে বাস / নসিমন এসে থামে - এতটুকুই
By Salehin Arshady in Travelers of Bangladesh
ক্রেডিটঃ রাকিব কিশোর, এস.কে জাহিদুর রহমান, মাহমুদ ফারুক
ক্রেডিটঃ রাকিব কিশোর, এস.কে জাহিদুর রহমান, মাহমুদ ফারুক
No comments:
Post a Comment